পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 মোতির মা বললে, “কেন, থাকবে কেন আমার দুধের বাটির অপরাধ কী?”

 কুমু বললে, “এখনও স্নান করি নি, পূজা করি নি।”

 মোতির মা বললে, “যাও তুমি স্নান করতে, আমি অপেক্ষা করে থাকব।”

 কুমু স্নান সেরে এল। মোতির মা ভাবলে, এইবার সে খোলা ছাদের কোণটাতে গিয়ে বসবে। কুমু মুহূর্তের জন্যে অভ্যাসের টানে ছাদের দিকে যেতে পা বাড়িয়েছিল, গেল না, ফিরে আবার সেই মাটিতে এসে বসল। তার মন তৈরি ছিল না।

 মোতির মাকে কুমু জিজ্ঞাসা করলে, “দাদার চিঠি কি আসে নি?”

 চিঠি খুব সম্ভব এসেছে মনে করেই আজ খুব ভোরে মোতির মা নিজে লুকিয়ে আপিস-ঘরে গিয়ে চিঠির দেরাজটা টানতে গিয়ে দেখলে সেটা চাবি দিয়ে বন্ধ। অতএব এখন থেকে চুরির উপর বাটপাড়ি করবার রাস্তা আটক রইল।

 মোতির মা বললে, “ঠিক বলতে তো পারি নে, খবর নিয়ে দেখব।”

 এমন সময় হঠাৎ শ্যামা এসে উপস্থিত; বললে, “বউ, তোমাকে এমন শুকনো দেখি যে, অসুখ করে নি তো?”

 কুমু বললে, “না।”

 “বাড়ির জন্যে মনটা কেমন করছে। আহা, তা তো হতেই পারে। তা তোমার দাদা তো আসছেন, দেখা হবে।”

 কুমু চমকে উঠে শ্যামার মুখের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে চাইলে।

 মোতির মা জিজ্ঞাসা করলে, “এ খবর তুমি কোথায় পেলে বকুলফুল?”

 “ওই শোনো! এ তো সবাই জানে। আমাদের রান্নাঘরের পার্বতী যে বললে, ওঁর বাপের বাড়ির সরকার এসেছিল রাজাবাহাদুরের কাছে,

১৫৯