পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

বউয়ের খবর নিতে; তার কাছে শুনেছে, চিকিৎসার জন্যে বউয়ের দাদা আজকালের মধ্যেই কলকাতায় আসছেন।”

 কুমু উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করলে, “তাঁর ব্যামো কি বেড়েছে?”

 “তা বলতে পারিনে। তবে এমন কিছু ভাবনার কথা নেই, তাহলে শুনতুম।”

 শ্যামা বুঝেছিল, ওর দাদার খবর মধুসূদন কুমুকে দেয় নি, যে-বউয়ের মন পায় নি, পাছে সে বাড়িমুখো হয়ে আরও অন্যমনস্ক হয়ে যায়। কুমুর মনটাকে উসকিয়ে দিয়ে বললে, “তোমার দাদার মতো মানুষ হয় না, এই কথা সবার কাছেই শুনি। বকুলফুল, চলো, দেরি হয়ে যাচ্ছে, ভাঁড়ার দিতে হবে। আপিসের রান্না চড়াতে দেরি হলে মুশকিল বাধবে।”

 মোতির মা দুধের বাটিটা আর-একবার কুমুর কাছে এগিয়ে নিয়ে বললে, “দিদি, দুধ ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে, খেয়ে ফেলো। লক্ষ্মীটি।”

 এবার কুমু দুধ খেতে আপত্তি করলে না।

 মোতির মা কানে-কানে জিজ্ঞাসা করলে,“ভাঁড়ার-ঘরে যাবে আজ?”

 কুমু বললে, “আজ থাক্; গোপালকে আমার কাছে একবার পাঠিয়ে দাও।”

 একটা কালো কঠোর ক্ষুধিত জরা বাহির থেকে কুমুকে গ্রাস করেছে রাহুর মতো। যে পরিণত বয়স শান্ত স্নিগ্ধ শুভ্র সুগম্ভীর, এ তো তা নয়; যা লালায়িত, যার সংযমের শক্তি শিথিল, যার প্রেম বিষয়াসক্তিরই স্বজাতীয়, তারই স্বেদাক্ত স্পর্শে কুমুর এত বিতৃষ্ণা। ওর স্বামীর বয়স বেশি বলে কুমুর কোনো আক্ষেপ ছিল না, কিন্তু সেই বয়স নিজের মর্যাদা ভুলেছে বলে তার এত পীড়া। সম্পূর্ণ আত্মনিবেদন একটা ফলের মতো, আলো-হাওয়ায় মুক্তির মধ্যে সে পাকে, কাঁচা ফলকে জাঁতায় পিষলেই

১৬০