পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 হাবলু খানিকক্ষণ গম্ভীর হয়ে বসে ভাবলে। হঠাৎ বলে উঠল, “জেঠাইমা, জবাফুলের রঙ ঠিক তােমার শাড়ির এই লাল পাড়ের মতো।” এইটুকুতে ওর মনের সব কথা বলা হয়ে গেল।

 এমন সময় হঠাৎ পিছনে দেখে মধুসূদন। পায়ের শব্দ পাওয়া যায় নি। এখন অন্তঃপুরে আসবার সময় নয়। এই সময়টাতে বাইরের আপিস-ঘরে ব্যাবসা-ঘটিত কর্মের যত উচ্ছিষ্ট পরিশিষ্ট এসে জোটে; এই সময় দালাল অসে, উমেদার আসে, যত রকম খুচরাে খবর ও কাগজপত্র নিয়ে সেক্রেটারি আসে। আসল কাজের চেয়ে এই-সব উপরি-কাজের ভিড় কম নয়।


৩৯

 যে-ভিক্ষুকের ঝুলিতে কেবল তুষ জমেছে, চাল জোটে নি, তারই মতাে মন নিয়ে আজ সকালে মধুসূদন খুব রুক্ষভাবেই বাইরে চলে গিয়েছিল। কিন্তু অতৃপ্তির আকর্ষণ বড়াে প্রচণ্ড। বাধাতেই বাধার উপর টেনে আনে।

 ওকে দেখেই হাবলুর মুখ শুকিয়ে গেল, বুক উঠল কেঁপে, পালাবার উপক্রম করলে। কুমু জোর করে চেপে ধরলে, উঠতে দিলে না।

 সেটা মধুসূদন বুঝতে পারলে। হাবলুকে খুব একটা ধমক দিয়ে বললে, “এখানে কী করছিস? পড়তে যাবি নে?”

 গুরুমশায়ের আসবার সময় হয় নি, এ-কথা বলবার সাহস হাবলুর ছিল না—ধমকটাকে নিঃশব্দে স্বীকার করে নিয়ে মাথা হেঁট করে আস্তে আস্তে উঠে চলল।

 তাকে বাধা দেবার জন্য উদ্যত হয়েই কুমু থেমে গেল। বললে, “তােমার ফুল ফেলে গেলে যে, নেবে না?” বলে সেই রুমালের

১৬৪