পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

বসল। দু-চার লাইন লেখা হতেই মধুসূদন ঘরে এসে উপস্থিত। তাড়াতাড়ি চিঠি চাপা দিয়ে কুমু শক্ত হয়ে বসল। মধুসূদনের হাতে রুপােয় সােনায় মিনের-কাজ-করা হাতল-দেওয়া একটি ফলদানি, উপরে ফুলকাটা সুগন্ধি একটি রেশমের রুমাল। হাসিমুখে ডেস্কে সেটি কুমুর সামনে রাখলে। বললে, “খুলে দেখো তাে।”

 কুমু রুমালটা তুলে নিয়ে দেখে, সেই দামি ফলদানিতে কানায়-কানায় ভরা এলাচদানা। যদি একলা থাকত হেসে উঠত। কোনাে কথা না বলে কুমু গম্ভীর হয়ে চুপ করে রইল। এর চেয়ে হাসা ভালো ছিল।

 মধুসূদন বললে, “এলাচদানা লুকিয়ে খাবার কী দরকার? এতে লজ্জা কী বলো। রােজ আনিয়ে দেব—কত চাও? আমাকে আগে বললে না কেন?”

 কুমু বললে, “তুমি পারবে না আনিয়ে দিতে।”

 “পারব না? অবাক করলে তুমি।”

 “না, পারবে না।”

 “অসম্ভব দাম নাকি এর!”

 “হাঁ, টাকায় মেলে না।”

 শুনেই মধুর মাথায় চট্ করে একটা সন্দেহ জাগল—বললে, “তােমার দাদা পার্সেল করে পাঠিয়েছেন বুঝি।”

 এ-প্রশ্নের জবাব দিতে কুমুর ইচ্ছে হল না। ফলদানিটা ঠেলে দিয়ে চলে যাবার জন্যে উঠে দাঁড়াল। মধুসূদন হাত ধরে আবার জোর করে তাকে বসিয়ে দিলে।

 মধুসূদনকে কোনো কথা বলতে না দিয়েই কুমু তাকে প্রশ্ন করলে, “দাদার বাড়ি থেকে তােমার কাছে লােক এসেছিল তাঁর খবর নিয়ে?”

 এ-কথাটা কুমু আগেই শুনে ফেলেছে জেনে মধুর মন ভারি বিরক্ত

১৬৭