পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 আহারের পর যথারীতি শোবার ঘরে খাটে তাকিয়ায় হেলান দিয়ে পান চিবোত চিবোতে মধুসূদন কুমুকে ডেকে পাঠালে। তাড়াতাড়ি কুমু চলে এল। সে জানে আজ দাদার চিঠি পাবে। শোবার ঘরে ঢুকে খাটের পাশে দাঁড়িয়ে রইল।

 মধুসূদন গুড়গুড়ির নলটা রেখে পাশে দেখিয়ে দিয়ে বললে, “ব’সো।”

 কুমু বসল। মধুসূদন তাকে যে-চিঠি দিলে তাতে কেবল এই কয়টি কথা আছে—

 প্রাণপ্রতিমাসু

 শুভাশীর্বাদরাশয়ঃ সন্তু

 চিকিৎসার জন্য শীঘ্রই কলিকাতায় যাইতেছি। সুস্থ হইলে তোমাকে দেখিতে যাইব। গৃহকর্মের অবকাশমতো মাঝে মাঝে কুশলসংবাদ দিলে নিরুদ্বিগ্ন হই।

 এই ছোটো চিঠিটুকু মাত্র পেয়ে কুমুর মনে প্রথমে একটা ধাক্কা লাগল। মনে মনে বললে, “পর হয়ে গেছি।” অভিমানটা প্রবল হতে না হতেই মনে এল, “দাদার হয়তো শরীর ভালো নেই, আমার কী ছোটো মন। নিজের কথাটাই সব-আগে মনে পড়ে।”

 মধুসূদন বুঝতে পারলে কুমু উঠি উঠি করছে; বললে, “যাচ্ছ কোথায়, একটু ব’সো।”

 কুমুকে তো বসতে বললে, কিন্তু কী কথা বলবে মাথায় আসে না। অবিলম্বে কিছু বলতেই হবে, তাই সকাল থেকে যে-কথাটা নিয়ে ওর মনে খটকা রয়েছে সেইটেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল। বললে, “সেই এলাচদানার ব্যাপারটা নিয়ে এত হাঙ্গামা করলে কেন? ওতে লজ্জার কথা কী ছিল।”

১৬৯