পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

শোনা গেল, সেই সঙ্গে আওয়াজ এল, “আপিসের সায়েব এসে বসে আছে।” মনে পড়ল আজ ডাইরেক্টরদের মিটিং। লজ্জিত হল যে সে এজন্যে প্রস্তুত হয় নি—সকালটা প্রায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ গেছে। এতবড়ো শৈথিল্য এতই ওর স্বভাব ও অভ্যাস-বিরুদ্ধ যে, এটা সম্ভব হল দেখে ও স্তম্ভিত।


৪০

 মধুসূদন চলে যেতেই কুমু খাট থেকে নেমে মেজের উপর বসে পড়ল। চিরজীবন ধরে এমন সমুদ্রে কি তাকে সাঁতার কাটতে হবে যার কূল কোথাও নেই? মধুসূদন ঠিকই বলেছে ওদের সঙ্গে তার চাল তফাত। আর সকল রকম তফাতের চেয়ে এইটেই দুঃসহ। কী উপায় আছে এর?

 এক সময় হঠাৎ কী মনে পড়ল, কুমু চলল নীচের তলায় মোতির মার ঘরের দিকে। সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময় দেখে, শ্যামাসুন্দরী উপরে উঠে আসছে।

 “কী বউ, চলেছ কোথায়? আমি যাচ্ছিলুম তোমার ঘরেই।”

 “কোনো কথা আছে?”

 “এমন কিছু নয়। দেখলুম ঠাকুরপোর মেজাজ কিছু চড়া, ভাবলুম তোমাকে একবার জিজ্ঞাসা করে জানি, নতুন প্রণয়ে খটকা বাধল কোন্‌খানটাতে। মনে রেখো বউ, ওর সঙ্গে কী রকম করে বনিয়ে চলতে হয় সে-পরামর্শ আমরাই দিতে পারি। বকুলফুলের ঘরে চলেছ বুঝি? তা যাও, মনটা খোলসা করে এস গে।”

 আজ হঠাৎ কুমুর মনে হল, শ্যামাসুন্দরী আর মধুসূদন একই মাটিতে গড়া এক কুমোরর চাকে। কেন এ-কথা মাথায় এল বলা শক্ত। চরিত্র বিশ্লেষণ করে কিছু বুঝেছে তা নয়, আকারে-প্রকারে বিশেষ যে মিল তাও

১৭১