পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

নয়, তবু দুজনের ভাবগতিকের একটা অনুপ্রাস আছে, যেন শ্যামাসুন্দরীর জগতে আর মধুসূদনের জগতে একই হাওয়া। শ্যামাসুন্দরী যখন বন্ধুত্ব করতে আসে তাও কুমুকে উলটো দিকে ঠেলা দেয়, গা কেমন করে ওঠে।

 মোতির মার শোবার ঘরে ঢুকেই কুমু দেখলে, নবীনে তাতে মিলে কী একটা নিয়ে হাত-কাড়াকাড়ি চলছে। ফিরে যাবে-যাবে মনে করছে, এমন সময় নবীন বলে উঠল, “বৌদিদি, যেয়ো না যেয়ো না। তোমার কাছেই যাচ্ছিলুম; নালিশ আছে।”

 “কিসের নালিশ?”

 “একটু ব’সো, দুঃখের কথা বলি।”

 তক্তপোশের উপর কুমু বসল।

 নবীন বললে, “বড়ো অত্যাচার! এই ভদ্রমহিলা আমার বই রেখেছেন লুকিয়ে।”

 “এমন শাসন কেন?”

 “ঈর্ষা,—যেহেতু নিজে ইংরেজি পড়তে পারেন না। আমি স্ত্রীশিক্ষার পক্ষে, কিন্তু উনি স্বামী-জাতির এডুকেশনের বিরোধী। আমার বুদ্ধির যতই উন্নতি হচ্ছে, ওঁর বুদ্ধির সঙ্গে ততই গরমিল হওয়াতে ওঁর আক্রোশ। অনেক করে বোঝালেম যে, এতবড়ো যে সীতা তিনিও রামচন্দ্রের পিছনে পিছনেই চলতেন; বিদ্যেবুদ্ধিতে আমি যে তোমার চেয়ে অনেক দূরে এগিয়ে এগিয়ে চলছি এতে বাধা দিয়ো না।”

 “তোমার বিদ্যের কথা মা সরস্বতী জানেন, কিন্তু বুদ্ধির বড়াই করতে এসো না বলছি।”

 নবীনের মহা বিপদের ভান-করা মুখভঙ্গি দেখে কুমু খিল খিল করে হেসে উঠল। এ-বাড়িতে এসে অবধি এমন মন খুলে হাসি এই ওর প্রথম।

১৭২