পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

এই হাসি নবীনের বড় মিষ্টি লাগল। সে মনে-মনে বললে, “এই আমার কাজ হল, আমি বউরানীকে হাসাব।”

 কুমু হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করলে, “কেন ভাই ঠাকুরপাের বই লুকিয়ে রেখেছ।”

 “দেখাে তো দিদি। শােবার ঘরে কি ওঁর পাঠশালার গুরুমশায় বসে আছেন? খেটেখুটে রাত্তিরে ঘরে এসে দেখি, একটা পিদ্দিম জলছে, তার সঙ্গে আর-একটা বাতির সেজ, মহাপণ্ডিত পড়তে বসে গেছেন। খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যায়, তাগিদের পর তাগিদ, হুঁশ নেই।”

 “সত্যি ঠাকুরপাে?”

 “বউরানী, খাবার ভালােবাসি নে এতবড়াে তপস্বী নই, কিন্তু তার চেয়ে ভালােবাসি ওঁর মুখের মিষ্টি তাগিদ। সেইজন্যেই ইচ্ছে করে খেতে দেরি হয়ে যায়, বই পড়াটা একটা অছিলে।”

 “ওঁর সঙ্গে কথায় হার মানি।”

 “আর আমি হার মানি যখন উনি কথা বন্ধ করেন।”

 “তাও কখনাে ঘটে নাকি ঠাকুরপাে?”

 “দুটো একটা খুব তাজা দৃষ্টান্ত দিই তা হলে। অশ্রুজলের উজ্জ্বল অক্ষরে মনে লেখা রয়েছে।”

 “আচ্ছা আচ্ছা, তােমার আর দৃষ্টান্ত দিতে হবে না। এখন আমার চাবি কোথায় বলো। দেখাে তে দিদি, আমার চাবি লুকিয়ে রেখেছেন।”

 “ঘরের লােকের নামে তাে পুলিস-কেস করতে পারি নে, তাই চোরকে চুরি দিয়ে শাসন করতে হয়। আগে দাও আমার বই।”

 “তােমাকে দেব না, দিদিকে দিচ্ছি।” ঘরের কোণে একটা ঝুড়িতে রেশম-পশম, টুকরা কাপড়, ছেঁড়া মােজা জমে ছিল; তারই তলা

১৭৩