পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “আমার আর কত অনিষ্ট হবে? আমি ভয় করি নে।” বলে নিজের হাত থেকে মোটা সোনার বালাজোড়া খুলে বললে, “আমার এই বালা বেচে দাদার জন্যে স্বস্ত্যয়ন করাতে হবে।”

 “কিছু দরকার হবে না, বউরানী, তুমি তাঁকে যে ভক্তি কর তারই পুণ্যে প্রতিমুহূর্তে তাঁর জন্যে স্বস্ত্যয়ন হচ্ছে।”

 “ঠাকুরপো, দাদার জন্যে আর কিছুই করতে পারব না। কেবল যদি পারি দেবতার দ্বারে তাঁর জন্যে সেবা পৌঁছিয়ে দেব।”

 “তোমাকে কিছু করতে হবে না, বউরানী। আমরা সেবক আছি কী করতে?”

 “তোমরা কী করতে পার বলো?”

 “আমরা পাপিষ্ঠ, পাপ করতে পারি। তাই করেও যদি তোমার কোনো কাজে লাগি তাহলে ধন্য হব।”

 “ঠাকুরপো, এ-কথা নিয়ে ঠাট্টা ক’রো না।”

 “একটুও ঠাট্টা নয়। পুণ্য করার চেয়ে পাপ করা অনেক শক্ত কাজ, দেবতা যদি তা বুঝতে পারেন তাহলে পুরস্কার দেবেন।”

 নবীনের কথার ভাবে দেবতার প্রতি উপেক্ষা কল্পনা করে কুমুর মনে স্বভাবত আঘাত লাগতে পারত, কিন্তু তার দাদাও যে মনে মনে দেবতাকে শ্রদ্ধা করে না, এই অভক্তির ’পরে সে রাগ করতে পারে না যে। ছোটো ছেলের দুষ্টমির ’পরেও মায়ের যেমন সকৌতুক স্নেহ, এই রকম অপরাধের পরে ওরও সেই ভাব।

 কুমু একটু ম্লান হাসি হেসে বললে, “ঠাকুরপো, সংসারে তোমরা নিজের জোরে কাজ করতে পার; আমাদের যে সেই নিজের জোর খাটাবার জো নেই। যাদের ভালোবাসি অথচ নাগাল মেলে না, তাদের কাজ করব কী করে? দিন যে কাটে না, কোথাও যে

১৮৭