পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

কার্পেটের উপর। কালু বললে “ছোটো খুকী, এইতো সেদিন চলে এলে দিদি, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন কত বৎসর দেখি নি।”

 “দাদা কেমন আছেন আগে বলো।”

 “বড়োবাবুর জন্যে বড়ো ভাবনায় কেটেছে। তুমি যেদিন চলে এলে তার পরের দিনে খুব বাড়াবাড়ি হয়েছিল। কিন্তু অসম্ভব জোরালো শরীর কিনা, দেখতে-দেখতে সামলে নিলেন। ডাক্তাররা আশ্চর্য হয়ে গেছে।”

 “দাদা কাল আসছেন?”

 “তাই কথা ছিল। কিন্তু আরও দুটো দিন দেরি হবে। পূর্ণিমা পড়েছে, সকলে তাকে বারণ করলে, কী জানি যদি আবার জ্বর আসে। সে যেন হল, কিন্তু তুমি কেমন আছ দিদি?”

 “আমি বেশ ভালোই আছি।”

 কালু কিছু বলতে ইচ্ছে করল না, কিন্তু কুমুর মুখের সে-লাবণ্য গেল কোথায়? চোখের নীচে কালি কেন? অমন চিকন রঙ তার ফ্যাকাশে হয়ে গেল কী জন্যে? কুমুর মনে একটা প্রশ্ন জাগছে, সেটা সে মুখ ফুটে বলতে পারছে না, “দাদা আমাকে মনে করে কি কিছু বলে পাঠান নি?” তার সেই অব্যক্ত প্রশ্নের উত্তরের মতোই যেন কালু বললে, “বড়োবাবু আমার হাত দিয়ে তোমাকে একটি জিনিস পাঠিয়েছেন।”

 কুমু ব্যর্থ হয়ে বললে, “কী পাঠিয়েছেন, কই সে?”

 “সেটা বাইরে রেখে এসেছি।”

 “আনলে না কেন?”

 ব্যস্ত হয়ো না দিদি। মহারাজা বললেন, তিনি নিজে নিয়ে আসবেন।”

 “কী জিনিস বলো আমাকে।”

১৯৩