পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “ইনি যে আমাকে বলতে বারণ করলেন।” ঘরের চারি দিকে তাকিয়ে কালু বললে, “বেশ আদরযত্নে তোমাকে রেখেছে—বড়োবাবুকে গিয়ে বলব, কত খুশি হবেন। প্রথম দুদিন তোমার খবর পেতে দেরি হয়ে তিনি বড়ো ছটফট করেছেন। ডাকের গোলমাল হয়েছিল, শেষকালে তিনটে চিঠি একসঙ্গে পেলেন।”

 ডাকের গোলমাল হবার কারণটা যে-কোন্‌খানে কুমু তা আন্দাজ করতে পারলে।

 কালুদাকে কুমু খেতে বলতে চায়, সাহস করতে পারছে না। একটু সংকোচের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে, “কালুদা, এখনও তোমার খাওয়া হয় নি?”

 “দেখেছি, কলকাতায় সন্ধ্যের পর খেলে আমার সহ্য হয় না দিদি, তাই আমাদের রামসদয় কবিরাজের কাছ থেকে মকরধ্বজ আনিয়ে খাচ্ছি। বিশেষ কিছু তো ফল হল না।”

 কালু বুঝেছিল, বাড়ির নূতন বউ, এখনও কর্তৃত্ব হাতে আসে নি, মুখ ফুটে খাওয়াবার কথা বলতে পারবে না, কেবল কষ্ট পাবে।

 এমন সময় মোতির মা দরজার আড়াল থেকে হাতছানি দিয়ে কুমুকে ডেকে নিয়ে বললে, “তোমাদের ওখান থেকে মুখুজ্যেমশায় এসেছেন, তাঁর জন্যে খাবার তৈরি। নীচের ঘরে তাঁকে নিয়ে এস, খাইয়ে দেবে।”

 কুমু ফিরে এসেই বললে, “কালুদা, তোমার কবিরাজের কথা রেখে দাও, তোমাকে খেয়ে যেতেই হবে।”

 কী বিভ্রাট! এ যে অত্যাচার! আজ থাক্‌, না-হয় আর-একদিন হবে।”

১৯৪