পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 করে শােনাবে ঠিক করে বলো। কাল?”

 “আচ্ছা, কাল।”

 “সন্ধ্যেবেলায় আফিস থেকে ফিরে এলে?”

 “হাঁ, তাই হবে।”

 “এসরাজটা পেয়ে খুব খুশি হয়েছ?”

 “খুব খুশি হয়েছি।”

 শালের ভিতর থেকে একটা চামড়ার কেস বের করে মধুসূদন বললে, “তােমার জন্যে যে মুক্তার মালা কিনে এনেছি, এটা পেয়ে ততখানিই খুশি হবে না?”

 এমনতরাে মুশকিলের প্রশ্ন কেন জিজ্ঞাসা করা? কুমু চুপ করে এসরাজের ছড়িটা নাড়াচাড়া করতে লাগল।

 “বুঝেছি, দরখাস্ত নামঞ্জুর।”

 কুমু কথাটা ঠিক বুঝলে না।

 মধুসূদন বললে, “তােমার বুকের কাছে আমার অন্তরের এই দরখাস্তটি লটকিয়ে দেব ইচ্ছে ছিল—কিন্তু তার আগেই ডিসমিস।”

 কুমুর সামনে মেজের উপর গয়নাটা রইল খােলা। দুজনে কেউ একটিও কথা বললে না। থেকে থেকে কুমু যে-রকম স্বপ্নাবিষ্ট হয়ে যায়, তেমনি হয়ে রইল। একটু পরে যেন সচেতন হয়ে মালাটা তুলে নিয়ে গলায় পরলে, আর মধুসূদনকে প্রণাম করলে। বললে, “তুমি আমার বাজনা শুনবে?”

 মধুসূদন বললে, “হাঁ, শুনব।”

 “এখনই শােনাব” বলে এসরাজে সুর বাঁধলে। কেদারায় আলাপ আরম্ভ করলে; ভুলে গেল ঘরে কেউ আছে, কেদারা থেকে পৌছল ছায়ানটে। যে-গানটি সে ভালােবাসে সেইটি ধরল, “ঠাড়ি রহো মেরে

১৯৮