পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

দিতে পারলে না; মুকুন্দলাল ভয়ে-ভয়ে অন্তঃপুরে গেলেন। “বড়োবউ, মাপ করো, অপরাধ করেছি, আর-কখনাে এমন হবে না” এই কথা মনে মনে বলতে বলতে শােবার ঘরের দরজার কাছে একটুখানি থমকে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকলেন। মনে-মনে নিশ্চয় স্থির করেছিলেন যে, অভিমানিনী বিছানায় পড়ে আছেন। একেবারে পায়ের কাছে গিয়ে পড়বেন, এই ভেবে ঘরে ঢুকেই দেখলেন ঘর শূন্য। বুকের ভিতরটা দমে গেল। শােবার ঘরে বিছানায় নন্দরানীকে যদি দেখতেন তবে বুঝতেন যে, অপরাধ ক্ষমা করবার জন্যে মানিনী অর্ধেক রাস্তা এগিয়ে আছেন। কিন্তু বড়ােবউ যখন শােবার ঘরে নেই তখন মুকুন্দলাল বুঝলেন তাঁর প্রায়শ্চিত্তটা হবে দীর্ঘ এবং কঠিন। হয়তাে আজ রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, কিংবা হবে আরও দেরি। কিন্তু এতক্ষণ ধৈর্য ধরে থাকা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। সম্পূর্ণ শাস্তি এখনই মাথা পেতে নিয়ে ক্ষমা আদায় করবেন, নইলে জলগ্রহণ করবেন না। বেলা হয়েছে, এখনও স্নানাহার হয় নি, এ দেখে কি সাধ্বী থাকতে পারবেন? শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখলেন, প্যারী দাসী বারান্দার এক কোণে মাথায় ঘােমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে। জিজ্ঞাসা করলেন, “তাের বড়ােবউমা কোথায়?”

 সে বললে, “তিনি তাঁর মাকে দেখতে পরশুদিন বৃন্দাবনে গেছেন।”

 ভালাে যেন বুঝতে পারলেন না, রুদ্ধকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন, “কোথায় গেছেন?”

 “বৃন্দাবনে। মায়ের অসুখ।”

 মুকুন্দলাল একবার বারান্দার রেলিং চেপে ধরে দাঁড়ালেন। তার পরে দ্রুতপদে বাইরের বৈঠকখানায় গিয়ে একা বসে রইলেন। একটি কথা কইলেন না। কাছে আসতে কারও সাহস হয় না।

২০