পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

খারাপ, এখন অন্য সব কথা ভুলে এইটেতেই মধুসূদনকে কোমর বাঁধতে হবে।

 রাত্রে মধুসূদনের সঙ্গে আলাপ হবার পর নবীন ফিরে এসে দেখলে, কুমুর সঙ্গে মোতির মার তখনো কথা চলছে। নবীন বললে, “বউরানী, তোমার দাদার চিঠি আছে।”

 কুমু চমকে উঠে চিঠিখানা নিলে। খুলতে হাত কাঁপতে লাগল। ভয় হল হয়তো কিছু অপ্রিয় সংবাদ আছে। হয়তো এখন আসাই হবে না। খুব ধীরে ধীরে খাম খুলে পড়ে দেখলে। একটু চুপ করে রইল। মুখ দেখে মনে হল যেন কোথায় ব্যথা বেজেছে। নবীনকে বললে, “দাদা আজ বিকেলে তিনটের সময় কলকাতায় এসেছেন।”

 “আজই এসেছেন। তাঁর তো—”

 “লিখেছেন দুই-একদিন পরে আসবার কথা ছিল, কিন্তু বিশেষ কারণে আগেই আসতে হল।”

 কুমু আর কিছু বললে না। চিঠির শেষদিকে ছিল, একটু সেরে উঠলেই বিপ্রদাস কুমুকে দেখতে আসবে, সেজন্যে কুমু যেন ব্যস্ত বা উদ্বিগ্ন না হয়। এই কথাটাই আগেকার চিঠিতেও ছিল। কেন, কী হয়েছে? কুমু কী অপরাধ করেছে? এ যেন একরকম স্পষ্ট করেই বলা, তুমি আমাদের বাড়িতে এসো না। ইচ্ছে করল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে খানিকটা কেঁদে নেয়। কান্না চেপে পাথরের মত শক্ত হয়ে বসে রইল।

 নবীন বুঝলে, চিঠির মধ্যে একটা কী কঠিন মার আছে। কুমুর মুখ দেখে করুণায় ওর মন ব্যথিত হয়ে উঠল। বললে, “বউরানী, তাঁর কাছে তো কালই তোমার যাওয়া চাই।”

 “না, আমি যাব না।” যেমনি বলা অমনি আর থাকতে পারলে না, দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠল। মোতির মা কোনো প্রশ্ন না করে কুমুকে

২১৫