পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 একটু পরেই মধুসূদনের অভ্যন্ত গুড়গুড়িতে তামাক সেজে তার চৌকির বাঁ পাশে বসিয়ে নলটা টেবিলের উপর আস্তে আস্তে তুলে রাখলে। মধুসূদন তখনই অনুভব করলে, এটারও দরকার ছিল। ক্ষণকালের জন্যে পেনসিলটা রেখে তামাক টানতে লাগল।

 এই অবকাশে নবীন কথা পাড়লে, “দাদা, শুতে যাবে না? অনেক রাত হয়েছে। বউরানী তােমার জন্যে হয়তাে জেগে বসে আছেন।”

 “জেগে বসে আছেন” কথাটা এক মুহূর্তে মধুসূদনের মনের ভিতরে গিয়ে লাগল। ঢেউয়ের উপর দিয়ে জাহাজ যখন টলমল করতে করতে চলেছে, একটি ছোটো ডাঙার পাখি উড়ে এসে যেন মাস্তুলে বসল; ক্ষুব্ধ সমুদ্রের ভিতর ক্ষণকালের জন্যে মনে এনে দিলে শ্যামল দ্বীপের নিভৃত বনচ্ছায়ার ছবি। কিন্তু সে-কথায় মন দেবার সময় নয়, জাহাজ চালাতে হবে।

 মধুসূদন আপন মনের এইটুকু চাঞ্চল্যে ভীত হল। তখনই সেটা দমন করে বললে, “বড়ােবউকে শুতে যেতে বলো, আজ আমি বাইরে শোব।”

 “তাঁকে নাহয় এখানে ডেকে দিই” বলে নবীন গুড়গুড়ির কলকেটাতে ফুঁ দিতে লাগল।

 মধুসূদন হঠাৎ ঝেঁকে উঠে বলে উঠল, “না না।”

 নবীন তাতেও না দমে বললে, “তিনি যে তােমার কাছে দরবার করবেন বলে বসে আছেন।”

 রুক্ষরে মধুসূদন বললে, “এখন দরবারের সময় নেই।”

 “তােমার তাে সময় নেই, দাদা, তাঁরও তো সময় কম।”

 “কী, হয়েছে কী?”

 “বিপ্রদাসবাবু আজ কলকাতায় এসেছেন খবর পাওয়া গেছে, তাই বউরানী কাল সকালে—”

২১৯