পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 সেদিন তৃতীয়া; সন্ধ্যাবেলায় ঝড় উঠল। বাগানে মড়্ মড়্ করে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। থেকে-থেকে বৃষ্টির ঝাপটা ঝাঁকানি দিয়ে উঠছে ক্রুদ্ধ অধৈর্যের মতো। লোকজন খাওয়াবার জন্যে যে-চালাঘর তােলা হয়েছিল তার করােগেটেড লােহার চাল উড়ে দিঘিতে গিয়ে পড়ল। বাতাস বাণবিদ্ধ বাঘের মতাে গোঁ গোঁ করে গােঙরাতে গােঙরাতে আকাশে আকাশে লেজ ঝাপটা দিয়ে পাক খেয়ে বেড়ায়। হঠাৎ বাতাসের এক দমকে জানলাদরজাগুলো খড়্ খড়্ করে কেঁপে উঠল। কুমুদিনীর হাত চেপে ধরে মুকুন্দলাল বললেন, “মা কুমু, ভয় নেই, তুই তাে কোনাে দোষ করিস নি। ওই শোন্ দাঁতকড়মড়ানি, ওরা আমাকে মারতে আসছে।”

 বাবার মাথায় বরফের পুঁটুলি বুলােত বুলােতে কুমুদিনী বলে, “মারবে কেন বাবা? ঝড় হচ্ছে, এখনই থেমে যাবে।”

 “বৃন্দাবন? বৃন্দাবন...চন্দ্র...চক্রবর্তী! বাবার আমলের পুরুত—সে তাে মরে গেছে—ভূত হয়ে গেছে বৃন্দাবনে। কে বললে সে আসবে?”

 “কথা কোয়াে না বাবা, একটু ঘুমােও।”

 “ওই যে, কাকে বলছে, খবরদার, খবরদার।”

 “কিছু না, বাতাসে বাতাসে গাছগুলােকে ঝাঁকানি দিচ্ছে।”

 “কেন, ওর রাগ কিসের? এতই কী দোষ করেছি, তুই বল্ মা।”

 “কোনাে দোষ কর নি বাবা। একটু ঘুমােও।”

 “বিন্দে দূতী? সেই যে মধু অধিকারী সাজত।

মিছে কর কেন নিন্দে
ওগাে বিন্দে শ্রীগােবিন্দে—”

 চোখ বুজে গুন্ গুন্ করে গাইতে লাগলেন।—

২২