পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “সকালে যেতে চান?”

 “বেশিক্ষণের জন্যে না, একবার কেবল—”

 মধুসূদন হাত ঝাঁকানি দিয়ে উঠে বললে, “তা যান-না, যান। বাস আর নয়, তুমি যাও।”

 হুকুম আদায় করেই নবীন ঘর থেকে এক দৌড়। বাইরে আসতেই মধুসূদনের ডাক কানে এসে পৌঁছল, “নবীন।”

 ভয় লাগল আবার বুঝি দাদা হুকুম ফিরিয়ে নেয়। ঘরে এসে দাঁড়াতেই মধুসূদন বললে, “বড়োবউ এখন কিছুদিন তাঁর দাদার ওখানে গিয়েই থাকবেন, তুমি তার জোগাড় করে দিয়ো।”

 নবীনের ভয় লাগল, দাদার এই প্রস্তাবে তার মুখে পাছে একটুও উৎসাহ প্রকাশ পায়। এমনকি, সে একটু দ্বিধার ভাব দেখিয়ে মাথা চুলকোতে লাগল। বললে, “বউরানী গেলে বাড়িটা বড়ো খালি-খালি ঠেকবে।”

 মধুসূদন কোনো উত্তর না করে গুড়গুড়ির নলটা নামিয়ে রেখে কাজে লেগে গেল। বুঝতে পারলে প্রলোভনের রাস্তা এখনো খোলা আছে— ওদিকে একেবারেই না।

 নবীন আনন্দিত হয়ে চলে গেল। মধুসূদনের কাজ চলতে লাগল। কিন্তু কখন এই কাজের ধারার পাশ দিয়ে আর-একটা উলটো মানস-ধারা খুলে গেছে তা সে অনেকক্ষণ নিজেই বুঝতে পারে নি। এক সময়ে নীল পেনসিল প্রয়োজন শেষ না হতেই ছুটি নিল, গুড়গুড়ির নলটা উঠল মুখে। দিনের বেলায় মধুসূদনের মনটা কুমুর ভাবনা সম্বন্ধে যখন সম্পূর্ণ নিষ্কৃতি নিয়েছিল, তখন আগেকার দিনের মতো নিজের পরে নিজের একাধিপত্য ফিরে পেয়ে মধুসূদন খুব আনন্দিত হয়েছিল। কিন্তু যত রাত হচ্ছে ততই সন্দেহ হতে লাগল

২২০