পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

সেই জন্যই আজ তার মন এত কঠিন হতে আরম্ভ করেছে। প্রতিকূল ভাগ্য যখন বরদান করতে আসে তখন তার পায়ে মাথা ঠেকিয়ে যে-মেয়ে অবিলম্বে সেবা গ্রহণ করতে না পারে, তাকে মমতা করা মোতির মার পক্ষে অসম্ভব- এমনকি মার্জনা করাও।


৪৬

 বাড়ির সামনে আসতেই পালকির দরজা একটু ফাঁক করে কুমু উপরের দিকে চেয়ে দেখলে। রোজ এই সময়টা বিপ্রদাস রাস্তার ধারের বারান্দায় বসে খবরের কাগজ পড়ত, আজ দেখলে সেখানে কেউ নেই। আজ যে কুমু এখানে আসবে সে-খবর এ-বাড়িতে পাঠানো হয় নি। পালকির সঙ্গে মহারাজার তকমা-পর দরোয়ানকে দেখে এ-বাড়ির দরোয়ান ব্যস্ত হয়ে উঠল, বুঝলে যে দিদিঠাকরুন এসেছে। বার-বাড়ির আঙিনা পার হয়ে অন্তঃপুরের দিকে পালকি চলেছিল। কুমু থামিয়ে দ্রুতপদে বাইরের সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠে চলল। তার ইচ্ছে তাকে আর কেউ দেখবার আগে সব-প্রথমেই দাদার সঙ্গে তার দেখা হয়। নিশ্চয় সে জানত বাইরের আরাম-কামরাতেই রোগীর থাকবার ব্যবস্থা হয়েছে। ওখানে জানলা থেকে বাগানের কৃষ্ণচূড়া, কাঞ্চন ও অশথ গাছের একটি কুঞ্জসভা দেখতে পাওয়া যায়। সকালের রৌদ্র ডালপালার ভিতর দিয়ে এই ঘরেই প্রথম দেখা দেয়। এই ঘরটিই বিপ্রদাসের পছন্দ।

 কুমু সিঁড়ির কাছে আসতেই সর্বাগ্রে টম কুকুর ছুটে এসে ওর গায়ের ’পরে ঝাঁপিয়ে পড়ে চেঁচিয়ে লেজ ঝাপটিয়ে অস্থির করে দিলে। কুমুর সঙ্গে সঙ্গেই লাফাতে লাফাতে চেঁচাতে চেঁচাতে টম চলল। বিপ্রদাস একটা মুড়ে-তোলা কোচের পিঠে হেলান দিয়ে আধ-শোওয়া অবস্থায়, পায়ের

২২৮