“কার বাঁশি ঐ বাজে বৃন্দাবনে।
সই লাে সই
ঘরে আমি রইব কেমনে?”
“রাধু, ব্র্যাণ্ডি লে আও।”
কুমুদিনী বাবার মুখের দিকে ঝুঁকে পড়ে বলে, “বাবা, ও কী বলছ?” মুকুন্দলাল চোখ চেয়ে তাকিয়েই জিভ কেটে চুপ করেন। বুদ্ধি যখন অত্যন্ত বেঠিক তখনও এ কথা ভােলেন নি যে, কুমুদিনীর সামনে মদ চলতে পারে না।
একটু পরে আবার গান ধরলেন,
“শ্যামের বাঁশি কাড়তে হবে,
নইলে আমায় এ বৃন্দাবন ছাড়তে হবে।”
এই এলােমলো গানের টুকরােগুলাে শুনে কুমুর বুক ফেটে যায়— মায়ের উপর রাগ করে, বাবার পায়ের তলায় মাথা রাখে, যেন মায়ের হয়ে মাপ-চাওয়া।
মুকুন্দ হঠাৎ ডেকে উঠলেন, “দেওয়ানজি!”
দেওয়ানজি আসতে তাকে বললেন “ওই যেন ঠক্ ঠক্ শুনতে পাচ্ছি।”
দেওয়ানজি বললেন, “বাতাসে দরজা নাড়া দিচ্ছে।”
“বুড়ো এসেছে, সেই বৃন্দাবনচন্দ্র— টাক মাথায়, লাঠি হাতে, চেলির চাদর কাঁধে। দেখে এস তো। কেবলি ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্ করছে। লাঠি না খড়ম?”
রক্তবমন কিছুক্ষণ শান্ত ছিল। তিনটে রাত্রে আবার আরম্ভ হল। মুকুন্দলাল বিছানার চারিদিকে হাত বুলিয়ে জড়িতস্বরে বললেন, “বড়ােবউ, ঘর যে অন্ধকার! এখনও আলাে জ্বালবে না?”