পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

তখনই ভেবেছে মীরাবাইএর কথা। একান্ত মনে ইচ্ছা করেছে কেউ ওকে মীরাবাইএর আদর্শটা ভালো করে বুঝিয়ে দেয়।

 কুমু একটু চেষ্টা করে সংকোচ কাটিয়ে বলতে লাগল, “মীরাবাই আপনার যথার্থ স্বামীকে অন্তরের মধ্যে পেয়েছিলেন বলেই সমাজের স্বামীকে মন থেকে ছেড়ে দিতে পেরেছিলেন, কিন্তু সংসারকে ছাড়বার সেই বড়ো অধিকার কি আমার আছে?”

 বিপ্রদাস বললে, “কুমু, তোর ঠাকুরকে তুই তো সমস্ত মন দিয়েই পেয়েছিস।”

 “এক সময়ে তাই মনে করেছিলুম। কিন্তু যখন সংকটে পড়লুম তখন দেখি, প্রাণ আমার কেমন শুকিয়ে গেছে, এত চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতে তাঁকে যেন আমার কাছে সত্য করে তুলতে পারছি নে। আমার সব চেয়ে দুঃখ সেই।”

 “কুমু, মনের মধ্যে জোয়ার-ভাঁটা খেলে। কিছু ভয় করিস নে; রাত্তির মাঝে মাঝে আসে, দিন তা বলে তো মরে না। যা পেয়েছিস, তোর প্রাণের সঙ্গে তা এক হয়ে গেছে।”

 “সেই আশীর্বাদ করো, তাঁকে যেন না হারাই। নির্দয় তিনি দুঃখ দেন, নিজেকে দেবেন বলেই। দাদা, আমার জন্যে ভাবিয়ে আমি তোমাকে ক্লান্ত করছি।”

 “কুমু, তোর শিশুকাল থেকে তোর জন্যে ভাবা যে আমার অভ্যেস। আজ যদি তোর কথা জানা বন্ধ হয়ে যায়, তোর জন্যে ভাবতে না পাই, তা হলে শূন্য ঠেকে। সেই শূন্যতা হাতড়াতে গিয়েই তো মন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।”

 কুমু বিপ্রদাসের পায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললে, “আমার জন্যে তুমি কিন্তু কিছু ভেবো না, দাদা। আমাকে যিনি রক্ষা করবেন তিনি ভিতরেই আছেন, আমার বিপদ নেই।”

২৩৪