পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “যতদিন না ডাক পড়ে।”

 “তুই এখানে আসতে চেয়েছিলি?”

 “না, আমি চাই নি।”

 “এর মানে কী?”

 “মানের কথা ভেবে লাভ নেই দাদা। চেষ্টা করলেও বুঝতে পারব না। তোমার কাছে আসতে পেরেছি এই যথেষ্ট। যতদিন থাকতে পারি সেই ভালো। দাদা, তোমার খাওয়া হচ্ছে না, খেয়ে নাও।”

 চাকর এসে খবর দিলে মুখুজ্যেমশায় এসেছেন। বিপ্রদাস একটু যেন ব্যস্ত হয়ে উঠে বললে, “ডেকে দাও।”

৪৭

 কালু ঘরে ঢুকতেই কুমু তাকে প্রণাম করলে।

 কালু বললে, “ছোটোখুকী, এসেছ? এইবার দাদার সেরে উঠতে দেরি হবে না।”

 কুমুর চোখ ছলছল করে উঠল। অশ্রু সামলে নিয়ে বললে, “দাদা, তোমার বার্লিতে নেবুর রস দেবে না?”

 বিপ্রদাস উদাসীন ভাবে হাত ওলটালে, অর্থাৎ না হলেই বা ক্ষতি কী। কুমু জানে, বিপ্রদাস বার্লি খেতে ভালোবাসে না, তাই ও যখনই দাদাকে বার্লি খাইয়েছে বার্লিতে নেবুর রস এবং অল্প একটু গোলাপজল মিশিয়ে বরফ দিয়ে শরবতের মতো বানিয়ে দিত। সে আয়োজন আজ নেই, তবু বিপ্রদাস আপন ইচ্ছে কাউকে জানায়ও নি, যা পেয়েছে তাই বিতৃষ্ণা সঙ্গে খেয়েছে।

 বার্লি ঠিকমতো তৈরি করে আনবার জন্যে কুমু চলে গেল।

২৩৬