পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

সম্বন্ধ। দাদার শরীর কেন যে এত ক্লান্ত, কোন কাজের বিশেষ তাগিদে দাদা কলকাতায় চলে এসেছে, কুমু সমস্তই স্পষ্ট বুঝতে পারলে।

 “কালুদা, আমার কাছে লুকিয়ো না, দাদা টাকা ধার করতে এসেছে।”

 “তা, ধার করেই তো ধার শুধতে হবে; টাকা তো আকাশ থেকে পড়ে না। কুটুম্বদের খাতক হয়ে থাকাটা তো ভালো নয়।”

 “সে তো ঠিক কথা, তা টাকার জোগাড় করতে পেরেছ?”

 “ঘুরে ঘেরে দেখছি; হয়ে যাবে, ভয় কী।”

 “না, আমি জানি, সুবিধে করতে পার নি।”

 “আচ্ছা, ছোটোখুকী, সবই যদি জান, আমাকে জিজ্ঞাসা করা কেন? ছেলেবেলায় একদিন আমার গোঁফ টেনে ধরে জিজ্ঞাসা করেছিলে, গোঁফ হল কেমন করে? বলেছিলুম, সময় বুঝে গোঁফের বীজ বুনেছিলুম বলে। তাতেই প্রশ্নটার তখনই নিষ্পত্তি হয়ে গেল। এখন হলে জবাব দেবার জন্যে ডাক্তার ডাকতে হত। সব কথাই যে তোমাকে স্পষ্ট করে জানাতে হবে সংসারের এমন নিয়ম নয়।”

 “আমি তোমাকে বলে রাখছি, কালুদা, দাদার সম্বন্ধে সব কথাই আমাকে জানতে হবে।”

 “কী করে দাদার গোঁফ উঠল, তাও?”

 “দেখো, অমন করে কথা চাপা দিতে পারবে না। আমি দাদার মুখ দেখেই বুঝেছি, টাকার সুবিধে করতে পার নি।”

 “নাই যদি পেরে থাকি, সেটা জেনে তোমার লাভ হবে কী?”

 “সে আমি বলতে পারি নে, কিন্তু আমাকে জানতেই হবে। টাকা ধার পাও নি তুমি?”

 “না, পাই নি।”

 “সহজে পাবে না?”

২৩৯