পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

একলা দাদার ঘাড়ে সমস্ত বোঝা চাপিয়ে দিয়ে কোন্ প্রাণে ইংলণ্ডে বসে আছেন?

 কুমু ঘরে ঢুকে দেখে, বিপ্রদাস কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বিছানায় পড়ে আছে। এমন করলে শরীর কি সারতে পারে! বিরুদ্ধ ভাগ্যের দুয়ারে মাথা কুটে মরতে ইচ্ছে করে।

 দাদার শিয়রের কাছে বসে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে কুমু বললে, “মেজদাদা কবে আসবেন?”

 “তা তো বলতে পারি নে।”

 “তাঁকে আসতে লেখো না।”

 “কেন বল্ দেখি।”

 “সংসারের সমস্ত দায় একলা তোমারই ঘাড়ে, এ তুমি বইবে কী করে?”

 “কারও বা থাকে দাবি, কারও বা থাকে দায়; এই দুই নিয়ে সংসার। দায়টাকেই আমি আমার করেছি, এ আমি অন্যকে দেব কেন?”

 “আমি যদি পুরুষমানুষ হতুম জোর করে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিতুম।”

 “তাহলেই তো বুঝতে পারছিস কুমু, দায় ঘাড়ে নেবার একটা লোভ আছে। তুই নিজে নিতে পারছিস নে বলেই তোর মেজদাদাকে দিয়ে সাধ মেটাতে চাস। কেন, আমিই বা কী অপরাধ করেছি।”

 “দাদা, তুমি টাকা ধার করতে এসেছ?”

 “কিসের থেকে বুঝলি?”

 “তোমার মুখ দেখেই বুঝেছি। আচ্ছা, আমি কি কিছুই করতে পারি নে?”

 “কী ক’রে, বলো?”

২৪১