পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “এই মনে করো, কোনো দলিলে সই করে। আমার সইয়ের কি কোনো দামই নেই?”

 “খুবই দাম আছে; সে আমাদের কাছে, মহাজনের কাছে নয়।”

 “তোমার পায়ে পড়ি দাদা, বলো আমি কী করতে পারি।”

 “লক্ষ্মী হয়ে শান্ত হয়ে থাক্, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা কর, মনে রাখিস সংসারে সেও একটা মস্ত কাজ। তুফানের মুখে নৌকো ঠিক রাখাও যেমন একটা কাজ, মাথা ঠিক রাখাও তেমনি। আমার এসরাজটা নিয়ে আয়, একটু বাজা।”

 “দাদা, আমার বড়ো ইচ্ছে করছে একটা কিছু করি।”

 “বাজানোটা বুঝি একটা-কিছু নয়।”

 “আমি চাই খুব একটা শক্ত কাজ।”

 “দলিলে নাম সই করার চেয়ে এসরাজ বাজানো অনেক বেশি শক্ত। আন্ যন্ত্রটা।”


৪৮

 একদিন মধুসূদনকে সকলেই যেমন ভয় করত, শ্যামাসুন্দরীরও ভয় ছিল তেমনি। ভিতরে ভিতরে মধুসূদন তার দিকে কখনো কখনো যেন টলেছে, শ্যামাসুন্দরী তা আন্দাজ করেছিল। কিন্তু কোন্ দিক দিয়ে বেড়া ডিঙিয়ে যে ওর কাছে যাওয়া যায় তা ঠাহর করতে পারত না। হাতড়ে হাতড়ে মাঝে মাঝে চেষ্টা করেছে, প্রত্যেকবার ফিরেছে ধাক্কা খেয়ে। মধুসূদন একনিষ্ঠ হয়ে ব্যাবসা গড়ে তুলছিল, কাঞ্চনের সাধনায় কামিনীকে সে অত্যন্তই তুচ্ছ করেছে, মেয়েরা সেইজন্যে ওকে অত্যন্তই ভয় করত। কিন্তু এই ভয়েরও একটা আকর্ষণ আছে। দুরু দুরু বক্ষ এবং সংকুচিত ব্যবহার নিয়েই শ্যামাসুন্দরী ঈষৎ একটা আবরণের আড়ালে মুগ্ধমনে

২৪২