পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

জেগে, সেইজন্যেই অনায়াসে কুমুর চলে যাওয়াতে ওর এমন ধিক্‌কার লাগল। আজ ওর খাবার সময়ে শ্যামাসুন্দরী ইচ্ছে করেই কাছে এসে বসে নি; কী জানি কাল রাত্রে নিজেকে ধরা দেবার পরে মধুসূদন নিজের উপর পাছে বিরক্ত হয়ে থাকে। খাবার পর মধুসূদন শূন্য শোবার ঘরে এসে একটুখানি চুপ করে থাকল, তার পরে নিজেই শ্যামাকে ডেকে পাঠালে। শ্যামা লাল রঙের একটা বিলিতি শাল গায়ে দিয়ে যেন একটু সংকুচিতভাবে ঘরে ঢুকে এক ধারে নতনেত্রে দাঁড়িয়ে রইল। মধুসূদন ডাকলে, “এস, এইখানে এস, ব’সাে।”

 শ্যামা শিয়রের কাছে বসে “তােমাকে যে বড়ো রোগা দেখাচ্ছে আজ” বলে একটু ঝুঁকে পড়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

 মধুসূদন বললে, “আঃ, তােমার হাত বেশ ঠাণ্ডা।”

 রাত্রে মধুসূদন যখন শুতে এল শ্যামসুন্দরী অনাহুত ঘরে ঢুকে বললে, “আহা, তুমি একলা।”

 শ্যামাসুন্দরী একটু যেন স্পর্ধার সঙ্গেই কোনাে আর আবরণ রাখতে দিলে না। যেন অসংকোচে সবাইকে সাক্ষী রেখেই ও আপনার অধিকার, পাকা করে তুলতে চায়। সময় বেশি নেই, কবে আবার কুমু এসে পড়বে তার মধ্যে দখল সম্পূর্ণ হওয়া চাই। দখলটা প্রকাশ্য হলে তার জোর আছে, কোনােখানে লজ্জা রাখলে চলবে না। অবস্থাটা দেখতে দেখতে দাসীচাকরদের মধ্যেও জানাজানি হল। মধুসূদনের মনে বহুকালের প্রবৃত্তির আগুন যতবড়াে জোরে চাপা ছিল, ততবড়ো জোরেই তা অবারিত হল, কাউকে কেয়ার করলে না, মত্ততা খুব স্থূলভাবেই সংসারে প্রকাশ করে দিলে।

 নবীন মােতির মা দুজনেই বুঝলে, এ-বান আর ঠেকানাে যাবে না।

 “দিদিকে কি ডেকে আনবে না? আর কি দেরি করা ভালাে?”

২৪৪