পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “শরীরটা সত্য নয়, ছায়া, মাঝে মাঝে সে-খবরটা পাওয়া ভালো। ওতে শেষের পাঠ এগিয়ে থাকে।”

 কুমু ঘরে ঢুকেই বললে, “ঠাকুরপো, চলো কিছু খাবে।”

 “খাব, কিন্তু একটা শর্ত আছে। যতক্ষণ পূরণ না হবে, ব্রাহ্মণ অতিথি অভুক্ত তোমার দ্বারে পড়ে থাকবে।”

 “শর্তটা কী শুনি?”

 “আমাদের বাড়িতে থাকতেই দরবার জানিয়ে রেখেছিলুম কিন্তু সেখানে জোর পাই নি। ভক্তকে একখানি ছবি তোমায় দিতে হবে। সেদিন বলেছিলে নেই, আজ তা বলবার জো নেই, তোমার দাদার ঘরের দেয়ালে ওই তো সামনেই ঝুলছে।”

 ভালো ছবি দৈবাৎ হয়ে থাকে, কুমুর ওই ছবিটি তেমনি যেন দৈবের রচনা। কপালে যে-আলোটি পড়লে কুমুর মনের চেহারাটি মুখে প্রকাশ পায় সেই আলোটিই পড়েছিল। ললাটে নির্মল বুদ্ধির দীপ্তি, চোখে গভীর সারল্যের সকরুণতা। দাঁড়ানো ছবি। কুমুর সুন্দর ডান হাতটি একটা শূন্য চৌকির হাতার উপরে। মনে হয় যেন সামনে ও আপনারই একটা দূরকালের ছায়া দেখতে পেয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়েছে।

 নিজের এই ছবিটি কুমুর চোখে পড়ে নি। কলকাতা থেকে ছবিওআলা আনিয়ে বিবাহের কয়দিন আগে ওর দাদা এটি তুলিয়েছিল। তার পরে নিজের ঘরে ছবিটি টাঙিয়েছে, এইটেতে কুমুর হৃদয় আর্দ্র হয়ে গেল। ফটোগ্রাফের কপি আরও নিশ্চয় আছে, তাই দাদার মুখের দিকে চাইলো। নবীন বললে, “বুঝতে পারছেন, বিপ্রদাসবাবু, বউরানীর দয়া হয়েছে। দেখুন না ওঁর চোখের দিকে চেয়ে। অযোগ্য বলেই আমার প্রতি ওঁর একটু বিশেষ করুণা।”

 বিপ্রদাস হেসে বললে, “কুমু, আমার ওই চামড়ার বাক্সয় আরও

২৪৯