পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “ভারি ডাক্তার হয়েছিস তুই! একজনের কথা যদি আর-একজন শুনে নেয় তাতে রােগীর মন খুব সুস্থির হয় ভেবেছিস!”

 “আচ্ছা, আমি শুনব না, কিন্তু আজ থাক্।”

 “কুমু, ইংরেজ-কবি বলেছে, শ্রুত সংগীত মধুর, অশ্রুত সংগীত মধুরতর। তেমনি শ্রুত সংবাদ ক্লান্তিকর হতে পারে, কিন্তু অশ্রুত সংবাদ আরও অনেক ক্লান্তিকর, অতএব অবিলম্বে শুনে নেওয়াই ভালাে।”

 “আমি কিন্তু পনেরাে মিনিট পরেই আসব, আর তখনো যদি তােমাদের কথাবার্তা না থামে তবে আমি তার মধ্যেই এসরাজ বাজাব—ভীমপলশ্রী।”

 “আচ্ছ, তাতেই রাজি।”

 আধঘণ্টা পরে এসরাজ হাতে কুমু ঘরে ঢুকল, কিন্তু বিপ্রদাসের মুখের ভাব দেখে তখনই এসরাজটা দেয়ালের কোণে ঠেকিয়ে রেখে দাদার পাশে বসে তার হাত চেপে ধরে জিজ্ঞাসা করলে, “কী হয়েছে দাদা?”

 কুমু এতদিন বিপ্রদাসের মধ্যে যে-অস্থিরতা লক্ষ্য করেছিল তার মধ্যে একটা গভীর বিষাদ ছিল। বিপ্রদাসের জীবনে দুঃখ তাপ অনেক গেছে, কেউ তাকে সহজে বিচলিত হতে দেখে নি। বই পড়া, গানবাজনা করা, দূরবীন নিয়ে তারা দেখা, ঘােড়ায় চড়া, নানা জায়গা থেকে অজানা গাছপালা নিয়ে বাগান করা প্রভৃতি নানা বিষয়েই তার ঔৎসুক্য থাকাতে সে নিজের সম্বন্ধীয় দুঃখ কষ্টকে নিজের মধ্যে কখনাে জমতে দেয় নি। এবার রোগের দুর্বলতায় তাকে নিজের ছােটো গণ্ডির মধ্যে বড় বেশি করে বদ্ধ করেছে। এখন সে বাইরে থেকে সেবা ও সঙ্গ পাবার জন্যে উন্মুখ হয়ে থাকে, চিঠিপত্র ঠিকমতাে না পেলে উদ্বিগ্ন হয়, ভাবনাগুলো দেখতে দেখতে কালাে হয়ে ওঠে। তাই দাদার ’পরে কুমুর স্নেহ আজ যেন মাতৃস্নেহের মতাে রূপ ধরেছে— তার অমন ধৈর্যগম্ভীর আত্মসমাহিত দাদার

২৫৫