পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 বিপ্রদাস বলে, “তুই কি তবে সব কথা জানিস নে?”

 কুমু বললে, “না।”

 বিপ্রদাস চুপ করে রইল। একটু পরে বললে, “মেয়েদের অপমানের দুঃখ আমার বুকের মধ্যে জমা হয়ে রয়েছে। কেন তা জানিস?”

 কুমু কিছু না বলে দাদার মুখের দিকে চেয়ে রইল। খানিক পরে বললে, “চিরজীবন মা যা দুঃখ পেয়েছিলেন আমি তা কোনােমতে ভুলতে পারি নে, আমাদের ধর্মবুদ্ধিহীন সমাজ সেজন্যে দায়ী।”

 এইখানে ভাইবােনের মধ্যে প্রভেদ আছে। কুমু তার বাবাকে খুব বেশি ভালােবাসত, জানত তাঁর হৃদয় কত কোমল। সমস্ত অপরাধ কাটিয়েও তার বাবা ছিলেন খুব বড়ো এ-কথা না মনে করে সে থাকতে পারত না, এমনকি তার বাবার জীবনে যে শােচনীয় পরিণাম ঘটেছিল সেজন্যে সে তার মাকেই মনে মনে দোষ দিয়েছে।

 বিপ্রদাস ও তার বাবাকে বড়ো বলেই ভক্তি করেছে। কিন্তু বারে বারে স্খলনের দ্বারা তার মাকে তিনি সকলের কাছে অসম্মানিত করতে বাধা পান নি এটা সে কোনােমতে ক্ষমা করতে পারলে না। তার মা ও ক্ষমা করেন নি বলে বিপ্রদাস মনের মধ্যে গৌরব বােধ করত।

 বিপ্রদাস বললে, “আমার মা যে অপমান পেয়েছিলেন তাতে সমস্ত স্ত্রীজাতির অসম্মান। কুমু, তুই ব্যক্তিগতভাবে নিজের কথা ভুলে সেই অসম্মানের বিরুদ্ধে দাঁড়াবি, কিছুতে হার মানবি নে।”

 কুমু মুখ নিচু করে আস্তে আস্তে বললে, “বাবা কিন্তু মাকে খুব ভালােবাসতেন সে-কথা ভুলাে না, দাদা। সেই ভালােবাসায় অনেক পাপের মার্জনা হয়।”

 বিপ্রদাস বললে, “তা মানি, কিন্তু এত ভালােবাসা সত্ত্বেও তিনি এত সহজে মায়ের সম্মানহানি করতে পারতেন, সে পাপ সমাজের। সমাজকে

২৫৯