পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

সেজন্য ক্ষমা করতে পারব না, সমাজের ভালােবাসাই নেই, আছে কেবল বিধান।”

 “দাদা, তুমি কি কিছু শুনেছ?”

 “শুনেছি, সে-সব কথা তােকে আস্তে আস্তে পরে বলব।”

 “সেই ভালাে। আমার ভয় হচ্ছে আজকেকার এই-সব কথাবার্তায় তােমার শরীর আরও দুর্বল হয়ে যাবে।”

 “না কুমু,ঠিক তার উলটো। এত দুঃখের অবসাদে শরীরটা যেন এলিয়ে পড়ছিল। আজ যখন মন বলছে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করতে হবে, আমার শরীরের ভিতর থেকে শক্তি আসছে।”

 “কিসের লড়াই দাদা।”

 “যে-সমাজ নারীকে তার মূল্য দিতে এত বেশি ফাঁকি দিয়েছে তার সঙ্গে লড়াই।”

 “তুমি তার কি করতে পার দাদা?”

 “আমি তাকে না মানতে পারি। তা ছাড়া আরও আরও কী করতে পারি সে আমাকে ভাবতে হবে; আজ থেকেই শুরু হল, কুমু। এই বাড়িতে তাের জায়গা আছে, সে সম্পূর্ণ তাের নিজের, আর-কারও সঙ্গে আপস করে নয়। এইখানেই তুই নিজের জোরে থাকবি।”

 “আচ্ছা দাদা, সে হবে, কিন্তু আর তুমি কথা ক’য়ো না।”

 এমন সময় খবর এল, মােতির মা এসেছে।


৫১

 শোবার ঘরে কুমু মােতির মাকে নিয়ে বসল। কথা কইতে কইতে অন্ধকার হয়ে এল, বেহারা এল আলো জ্বলতে, কুমু নিষেধ করে দিলে।

 কুমু সব কথাই শুনলে; চুপ ক’রে রইল।

২৬০