পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “তোমার কথা শুনে যে ভয় লাগে। ঘরে কি যাবেই না?”

 “কোনো কালেই যাব না সে-কথা ভাবা শক্ত, যাবই সে-কথা সহজ নয়।”

 “আচ্ছা, তোমার দাদার কাছে একবার কথা বলে দেখব। দেখি তিনি কী বলেন। তাঁর দর্শন পাওয়া যাবে তো?”

 “চলো না, এখনই নিয়ে যাচ্ছি।”

 বিপ্রদাসের ঘরে ঢুকেই তার চেহারা দেখে মোতির মা থমকে দাঁড়াল, মনে হল যেন ভূমিকম্পের পরেকার আলো-নেবা চুড়ো-ভাঙা মন্দির ভিতরে একটা অন্ধকার আর নিস্তব্ধতা। প্রণাম করে পায়ের ধূলো নিয়ে মেজের উপর বসল।

 বিপ্রদাস ব্যস্ত হয়ে বললে, “এই যে চৌকি আছে।”

 মোতির মা মাথা নেড়ে বললে, “না, এখানে বেশ আছি।”

 ঘোমটার ভিতর থেকে তার চোখ ছলছল করতে লাগল। বুঝতে পারলে দাদার এই অবস্থায় কুমুকে ব্যথাই বাজছে।

 কুমু প্রসঙ্গটা সহজ করে দেবার জন্যে বললে, “দাদা, ইনি বিশেষ করে, এসেছেন তোমার মত জিজ্ঞাসা করতে।”

 মোতির মা বললে, “না না, মত জিজ্ঞাসা পরের কথা, আমি এসেছি ওঁর চরণ দর্শন করতে।”

 কুমু বললে, “উনি জানতে চান, ওঁদের বাড়িতে আমাকে যেতে হবে কি না।”

 বিপ্রদাস উঠে বসল; বললে, “সে তো পরের বাড়ি, সেখানে কুমু গিয়ে থাকবে কী করে?” যদি ক্রোধের সুরে বলত তাহলে কথাটার ভিতরকার আগুন এমন করে জ্বলে উঠত না। শান্ত কণ্ঠস্বর, মুখের মধ্যে উত্তেজনার লক্ষণ নেই।

২৬২