পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

জোরে থাকবে এটাকে মোতির মা স্পর্ধা বলেই মনে করে। মেয়েজাতের এত গুমর কেন। মধুসুদন যত অযোগ্য হোক, যত অন্যায় করুক, তবু তো পুরুষমানুষ; এক জায়গায় সে তার স্ত্রীর চেয়ে আপনিই বড়, সেখানে কোনো বিচার খাটে না। বিধাতার সঙ্গে মামলা করে জিতবে কে?

 মোতির মা বললে, “একদিন ওখানে যেতে তো হবেই, আর তো রাস্তা নেই।”

 “যেতে হবেই এ-কথা ক্রীতদাস ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে খাটে না।”

 “মন্ত্র পড়ে স্ত্রী যে কেনা হয়েই গেছে। সাত পাক যেদিন ঘোরা হল সেদিন সে যে দেহে মনে বাঁধা পড়ল, তার তো আর পালাবার জো রইল না। এ বাঁধন যে মরণের বাড়া। মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছি তখন এ-জন্মের মতো মেয়ের ভাগ্য তো আর কিছুতে উজিয়ে ফেরানো যায় না।”

 বিপ্রদাস বুঝতে পারলে, মেয়ের সম্মান মেয়েদের কাছেই সবচেয়ে কম। তারা জানেও না যে, এইজন্যে মেয়েদের ভাগ্যে ঘরে ঘরে অপমানিত হওয়া এত সহজ। তারা আপনার আলো আপনি নিবিয়ে বসে আছে। তার পরে কেবলই মরছে ভয়ে, কেবলই মরছে ভাবনায়, অযোগ্য, লোকের হাতে কেবলই খাচ্ছে মার, আর মনে করছে সেইটে নীরবে সহ্য করাতেই স্ত্রী-জন্মের সর্বোচ্চ চরিতার্থতা। না, মানুষের এত লাঞ্ছনাকে প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না। সমাজ যাকে এতদুর নামিয়ে দিলে সমাজকেই সে প্রতিদিন নামিয়ে দিচ্ছে।

 বিপ্রদাসের খাটের পাশেই মেজের উপর কুমু মুখ নিচু করে বসে ছিল। বিপ্রদাস মোতির মাকে কিছু না বলে কুমুর মাথায় হাত দিয়ে বললে, “একটা কথা তোকে বলি কুমু, বোঝবার চেষ্টা করিস। ক্ষমতা জিনিসটা যেখানে পড়ে-পাওয়া জিনিস, যার কোনো যাচাই নেই, অধিকার বজায়

২৬৪