পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

উপস্থিত। মেজাজটা খুবই খারাপ। সামান্য দামের একটা গিল্টি করা চুরোটের ছাইদান টেবিল থেকে অদৃশ্য হয়েছে। সম্প্রতি যাঁর অধিকারে সেটা এসেছে তিনি নিশ্চয়ই সেটাকে সোনা বলে ঠাউরেছেন, নইলে পরকাল খোয়াতে যাবেন কোন্ সাধে। জান তো তুচ্ছ একটা জিনিস নড়ে গেলে দাদার বিপুল সম্পত্তির ভিতটাতে যেন নাড়া লাগে, সে তিনি সইতে পারেন না। আজ সকালে আপিসে যাবার সময় আমাকে বলে গেলেন শ্যামকে দেশে পাঠাতে। আমি খুব উৎসাহের সঙ্গেই সেই পবিত্র কাজে লেগেছিলুম। ঠিক করেছিলুম তিনি আপিস থেকে ফেরবার আগেই কাজ সেরে রাখব। এমন সময়ে বেলা দেড়টার সময় হঠাৎ দাদা এক দমে আমার ঘরে এসে ঢুকে পড়লেন; বললেন, ‘এখনকার মতো থাক্।’ যেই ঘর থেকে বেরোতে যাচ্ছেন, আমার ডেস্কের উপর বউরানীর সেই ছবিটি চোখে পড়ল। থমকে গেলেন। বুঝলুম আড়-চাহনিটাকে সিধে করে নিয়ে ছবিটিকে দেখতে দাদার লজ্জা বোধ হচ্ছে। বললুম, ‘দাদা, একটু ব’সো, একটা ঢাকাই কাপড় তোমাকে দেখাতে চাই। মোতির মার ছোটো ভাজের সাধ, তাই তাকে দিতে হবে। কিন্তু গণেশরাম দামে আমাকে ঠকাচ্ছে বলে বোধ হচ্ছে। তোমাকে দিয়ে সেটা একবার দেখিয়ে নিতে চাই। আমার যতটা আন্দাজ তাতে মনে হয় না তো তেরো টাকা তার দাম হতে পারে। খুব বেশি হয় তো ন-টাকা সাড়ে ন-টাকার মধ্যেই হওয়া উচিত।

 মোতির মা অবাক হয়ে বললে, “ও আবার তোমার মাথায় কোথা থেকে এল? আমার ছোটো ভাজের সাধ হবার কোনো উপায়ই নেই। তার কোলের ছেলেটির বয়স তো সবে দেড় মাস। বানিয়ে বলতে তোমার আজকাল দেখছি কিছুই বাধে না। এই তোমার নতুন বিদ্যে পেলে কোথায়?”

২৬৯