পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

জনসমাগমে যেতে তার সংকোচের অন্ত নেই। হাতপা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, চোখ চেয়ে ভালাে করে দেখতেই পারে না।

 বিপ্রদাস তাকে দাবাখেলা শেখালে। নিজে অসামান্য খেলােয়াড়, কুমুর কাঁচা খেলা নিয়ে তার আমােদ লাগে। শেষকালে নিয়মিত খেলতে খেলতে কুমুর এতটা হাত পাকল যে, বিপ্রদাসকে সাবধানে খেলতে হয়। কলকাতায় কুমুর সমবয়সী মেয়ে-সঙ্গিনী না থাকাতে এই দুই ভাইবােন যেন দুই ভাইয়ের মতাে হয়ে উঠেছে। সংস্কৃত সাহিত্যে বিপ্রদাসের বড়াে অনুরাগ; কুমু একমনে তার কাছ থেকে ব্যাকরণ শিখেছে। যখন কুমারসম্ভব পড়লে তখন থেকে শিবপূজায় সে শিবকে দেখতে পেলে, সেই মহাতপস্বী যিনি তপস্বিনী উমার পরম তপস্যর ধন। কুমারীর ধ্যানে তার ভাবী পতি পবিত্রতার দৈবজ্যোতিতে উদ্ভাসিত হয়ে দেখা দিলে।

 বিপ্রদাসের ফটোগ্রাফ তােলার শখ, কুমুও তাই শিখে নিলে। ওরা কেউ বা নেয় ছবি, কেউ বা সেটাকে ফুটিয়ে তােলে। বন্দুকে বিপ্রদাসের হাত পাকা। পার্বণ উপলক্ষ্যে দেশে যখন যায়, খিড়কির পুকুরে ডাব, বেলের খােল, আখরােট প্রভৃতি ভাসিয়ে দিয়ে পিস্তল অভ্যাস করে; কুমুকে ডাকে, “আয় না কুমু, দেখ না চেষ্টা করে।”

 যে-কোনাে বিষয়েই তার দাদার রুচি সে-সমস্তকেই বহু যত্নে কুমু আপনার করে নিয়েছে। দাদার কাছে এসরাজ শিখে শেষে ওর হাত এমন হল যে, দাদা বলে, “আমি হার মানলুম।”

 এমনি করে, শিশুকাল থেকে যে-দাদাকে ও সব চেয়ে বেশি ভক্তি করে, কলকাতায় এসে তাকেই সে সব চেয়ে কাছে পেলে। কলকাতায় আসা সার্থক হল। কুমু স্বভাবতই মনের মধ্যে একলা। পর্বতবাসিনী উমার মতােই ও যেন এক কল্প-তপােবনে বাস করে, মানস-সরােবরের

২৭