পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

জানি। দাদা কিছুতেই বুঝতে পারেন না সোনার খাঁচাতে পাখির কেন লোভ নেই। নির্বোধ পাখি, অকৃতজ্ঞ পাখি।”

 “তা ভালোই তো, বড়ঠাকুর ডেকেই পাঠান না। সেই কথাই তো ছিল।”

 “আমার মনে হয়, ডাকবার আগেই বউরানী যদি যান ভালো হয়, দাদার ওইটুকু অভিমানের না-হয় জিত রইল। তা ছাড়া বিপ্রদাসবাবু তো চান বউরানী তাঁর সংসারে ফিরে যান, আমিই নিষেধ করেছিলুম।”

 বিপ্রদাসের সঙ্গে এই নিয়ে আজ কী কথা হয়েছে মোতির মা তার কোনো আভাস দিলে না। বললে, “বিপ্রদাসবাবুর কাছে গিয়ে বলোই না।”

 “তাই যাই, তিনি শুনলে খুশি হবেন।”

 এমন সময় কুমু দরজার বাইরে থেকে বললে, “ঘরে ঢুকব কী?”

 মোতির মা বললে, “তোমার ঠাকুরপো পথ চেয়ে আছেন।”

 “জন্ম-জন্ম পথ চেয়ে ছিলুম, এইবার দর্শন পেলুম।”

 “আঃ ঠাকুরপো, এত কথা তুমি বানিয়ে বলতে পার কী করে?”

 “নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাই, বুঝতে পারি নে।”

 “আচ্ছা, চলো এখন খেতে যাবে।”

 “খাবার আগে একবার তোমার দাদার সঙ্গে কিছু কথাবার্তা কয়ে আসি গে।”

 “না, সে হবে না।”

 “কেন?”

 “আজ দাদা অনেক কথা বলেছেন, আজ আর নয়।”

 “ভালো খবর আছে।”

 “তা হোক, কাল এসো বরঞ্চ। আজ কোনো কথা নয়।”

২৭২