কুমু বললে, “না দাদা, যাব না।” বলে বিপ্রদাসের হাঁটুর উপর উপুড় হয়ে পড়ল।
ঘর স্তব্ধ, কেবল থেকে থেকে দমকা বাতাসে একটা শিথিল জানলা খড়্ খড়্ করছে, আর বাইরে বাগানে গাছের পাতাগুলো মর্মরিয়ে উঠছে।
কুমু একটু পরে বিছানা থেকে উঠেই নবীনকে বললে, “চলো, আর দেরি নয়। দাদা, তুমি ঘুমোও।”
মোতির মা বাড়িতে ফিরে এসে বললে, “এতটা কিন্তু ভালো না।”
“অর্থাৎ চোখে খোঁচা দেওয়াটা যেমনি হোক না, চোখটা রাঙা হয়ে ওঠা একেবারেই ভালো নয়।”
“না গো না, ওটা ওঁদের দেমাক। সংসারে ওঁদের যোগ্য কিছুই মেলে না, ওঁরা সবার উপরে।”
“মেজোবউ, এতবড়ো দেমাক সবাইকে সাজে না, কিন্তু ওঁদের কথা আলাদা।”
“তাই বলে কি আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি করতে হবে?”
“আত্মীয়স্বজন বললেই আত্মীয়স্বজন হয় না। ওঁরা আমাদের থেকে সম্পূর্ণ আর-এক শ্রেণীর মানুষ। সম্পর্ক ধরে ওঁদের সঙ্গে ব্যবহার করতে আমার সংকোচ হয়।”
“যিনি যতবড়ো লোকই হোন না কেন, তবু সম্পর্কের জোর আছে এটা মনে রেখো।”
নবীন বুঝতে পারলে, এই আলোচনার মধ্যে কুমুর ’পরে মোতির মার একটুখানি ঈর্ষার ঝাঁজও আছে। তা ছাড়া এটাও সত্যি, পারিবারিক বাঁধনটার দাম মেয়েদের কাছে খুবই বেশি। তাই নবীন এ নিয়ে বৃথা তর্ক না করে বললে, “আর কিছুদিন দেখাই যাক না। দাদার আগ্রহটাও একটু বেড়ে উঠুক, তাতে ক্ষতি হবে না।”