শ্যামা বললে, “মহারাজকে বলো আমার অসুখ করেছে।”
মধুসুদন ভাবলে, ‘আস্পর্ধা তো কম নয়, হুকুম করলে আসে না!’
মনে ঠিক করে রেখেছিল আরও খানিক বাদে আসবে। তাও এল না। এগারোটা বাজতে মিনিট পনেরো বাকি। বিছানা ছেড়ে মধুসূদন দ্রুতপদে শ্যামার ঘরে গিয়ে ঢুকল। দেখলে ঘরে আলো নেই। অন্ধকারে বেশ দেখা গেল—শ্যামা মেজের উপর পড়ে আছে। মধুসূদন ভাবলে এ-সমস্ত কেবল আদর কাড়বার জন্যে।
গর্জন করে বললে, “উঠে এস বলছি, শীঘ্র উঠে এস। ন্যাকামি কোরো না।”
শ্যামা কিছু না বলে উঠে এল।
৫৪
পরদিন আপিসে যাবার আগে খাবার পরে শোবার ঘরে বিশ্রাম করতে এসেই মধুসুদন দেখলে ছবিটি নেই। অন্য দিনের মতো আজ শ্যামা পান নিয়ে মধুসূদনের সেবার জন্যে আগে থাকতে প্রস্তুত ছিল না। সে অনুপস্থিত। তাকে ডেকে পাঠানো হল। বেশ বোঝা গেল একটু কুণ্ঠিতভাবেই সে এল। মধুসূদন জিজ্ঞাসা করলে, “টেবিলের উপর ছবি ছিল, কী হল।”
শ্যামা অত্যন্ত বিস্ময়ের ভান করে বললে, “ছবি! কার ছবি?”
ভানের পরিমাণটা কিছু বেশি হয়ে পড়ল। সাধারণত পুরুষদের বুদ্ধিবৃত্তির পরে মেয়েদের অশ্রদ্ধা আছে বলেই এতটা সম্ভব হয়েছিল।
মধুসূদন ক্রুদ্ধস্বরে বললে, “ছবিটা দেখ নি।”
শ্যামা নিতান্ত ভালোমানুষের মতো মুখ করে বললে, “না, দেখি নি তো।”