পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 মধুসূদন গর্জন করে বলে উঠল, “মিথ্যে কথা বলছ।”

 “মিথ্যে কথা কেন বলব, ছবি নিয়ে আমি করব কী।”

 “কোথায় রেখেছ বের করে নিয়ে এস বলছি! নইলে ভালাে হবে না।”

 “ওমা! কী আপদ! তােমার ছবি আমি কোথায় পাব যে বের করে আনব।”

 বেহারাকে ডাক পড়ল। মধু তাকে বললে, “মেজোবাবুকে ডেকে আন্।”

 নবীন এল। মধুসূদন বললে, “বড়ােবউকে আনিয়ে নাও।”

 শ্যামা মুখ বাঁকিয়ে কাঠের পুতুলের মতাে চুপ করে বসে রইল।

 নবীন খানিকক্ষণ পরে মাথা চুলকোতে চুলকোতে বললে, “দাদা, ওখানে একবার কি তােমার নিজে যাওয়া উচিত হবে না? তুমি আপনি গিয়ে যদি বল তা হলে বউরানী খুশি হবেন।”

 মধুসূদন গম্ভীরভাবে খানিকক্ষণ গুড়্‌গুড়ি টেনে বললে, “আচ্ছা, কাল রবিবার আছে, কাল যাব।”

 নবীন মােতির মার কাছে এসে বললে, “একটা কাজ করে ফেলেছি।”

 "আমার পরামর্শ না নিয়েই।”

 “পরামর্শ নেবার সময় ছিল না।”

 “তাহলে তাে দেখছি তােমাকে পস্তাতে হবে।”

 “অসম্ভব নয়। কুষ্টিতে আমার বুদ্ধিস্থানে আর কোনাে গ্রহ নেই, আছেন নিজের স্ত্রী। এইজন্য সর্বদা তােমাকে হাতের কাছে রেখেই চলি। ব্যাপারটা হচ্ছে এই—দাদা আজ হুকুম করলেন বউরানীকে আনানাে চাই। আমি ফস করে বলে বসলেম, তুমি নিজে গিয়ে যদি কথাটা তোল ভালাে হয়। দাদা কী মেজাজে ছিলেন রাজি হয়ে গেলেন। তার পর থেকেই ভাবছি এর ফলটা কী হবে।”

২৮১