“না, সে ভালােই আছে।”
“চিঠিতে কী লিখেছেন বলো না দাদা।”
“পড়াশুনাের কথা।”
কিছুদিন থেকে বিপ্রদাস কুমুকে সুবােধের চিঠি পড়তে দেয় না। একটু-আধটু পড়ে শােনায়। এবার তাও নয়। চিঠিখানা চেয়ে নিতে কুমুর সাহস হল না, মনটা ছট্ফট্ করতে লাগল।
সুবােধ প্রথম-প্রথম হিসেব করেই খরচ চালাত। বাড়ির দুঃখের কথা তখনও মনে তাজা ছিল। এখন সেটা যতই ছায়ার মতাে হয়ে এসেছে, খরচও ততই চলেছে বেড়ে। বলছে, বড়োকম চালে চলতে না পারলে এখানকার সামাজিক উচ্চশিখরের আবহাওয়ায় পৌঁছানাে যায় না। আর তা না গেলে বিলেতে আসাই ব্যর্থ হয়।
দায়ে পড়ে দুই-একবার বিপ্রদাসকে তার-যােগে অতিরিক্ত টাকা পাঠাতে হয়েছে। এবার দাবি এসেছে হাজার পাউণ্ডের— জরুরি দরকার।
বিপ্রদাস মাথায় হাত দিয়ে বললে, পাব কোথায়। গায়ের রক্ত জল করে কুমুর বিবাহের জন্যে টাকা জমাচ্ছি, শেষে কি সেই টাকায় টান পড়বে? কী হবে সুবােধের ব্যারিস্টার হয়ে, কুমুর ভবিষ্যৎ ফতুর করে যদি তার দাম দিতে হয়?
সে-রাত্রে বিপ্রদাস বারান্দায় পায়চারি করে বেড়াচ্ছে। জানে না, কুমুদিনীর চোখেও ঘুম নেই। এক সময়ে যখন বড়াে অসহ্য হল কুমু ছুটে এসে বিপ্রদাসের হাত ধরে বললে, “সত্যি করে বলো দাদা, ছােড়দাদার কী হয়েছে? পায়ে পড়ি, আমার কাছে লুকিয়ােনা।”
বিপ্রদাস বুঝলে গােপন করতে গেলে কুমুদিনীর আশঙ্কা আরও বেড়ে উঠবে। একটু চুপ করে থেকে বললে, “সুবােধ টাকা চেয়ে পাঠিয়েছে, অত টাকা দেবার শক্তি আমার নেই।”