পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 নবীন একটু ক্ষুণ্ণ হয়ে বললে, “সে-কথা জানি মেজোবউ, কিন্তু তা নিয়ে বড়াই করি নে। পুনর্জন্ম যদি থাকে তবে সম্মানী হয়েই যেন জন্মাই, তাতে অন্নজলের যদি টানাটানি ঘটে সেও স্বীকার।”

 বস্তুত নবীন অনেক বারই দাদার আশ্রয় ছেড়ে গ্রামে চাষবাসের সংকল্প করেছে। মোতির মা মুখে তর্জনগর্জন করেছে, কাজের বেলায় কিছুতেই সহজে নড়তে চায় নি, নবীনকে বারে বারে আটকে রেখেছে। সে জানে ভাশুরের উপর তার সম্পূর্ণ দাবি আছে। ভাশুর তো শ্বশুরের স্থানীয়। তার মতে ভাশুর অন্যায় করতে পারে, কিন্তু তাকে অপমান বলা চলে না। কুমুর প্রতি কুমুর স্বামীর ব্যবহার যেমনই হোক তাই বলে কুমু স্বামীর ঘর অস্বীকার করতে পারে, এ-কথা মোতির মার কাছে নিতান্ত সৃষ্টিছাড়া।

 খবর এল, ডাক্তার এসেছে। কুমু বললে, “একটু অপেক্ষা করো, শুনে আসি ডাক্তার কী বলে।”

 ডাক্তার কুমুকে বলে গেল, নাড়ি আরও খারাপ, রাত্তিরে ঘুম কমেছে, বোধ হয় রোগী ঠিক বিশ্রাম পাচ্ছে না।

 অতিথিদের কাছে কুমু ফিরে যাচ্ছিল, এমন সময় কালু এসে বললে, “একটা কথা না বলে থাকতে পারছি নে, জাল বড়ো জটিল হয়ে এসেছে, তুমি যদি এই সময়ে শ্বশুরবাড়ি ফিরে না যাও, বিপদ আরও ঘনিয়ে ধরবে। আমি তো কোনো উপায় ভেবে পাচ্ছি নে।”

 কুমু চুপ করে দাড়িয়ে রইল। কালু বললে, “তোমার স্বামীর ওখান থেকে তাগিদ এসেছে, সেটা অগ্রাহ্য করবার শক্তি কি আমাদের আছে? আমরা যে একেবারে তার মুঠোর মধ্যে।”

 কুম বারান্দায় রেলিং চেপে ধরে বললে, “আমি কিছুই বুঝতে পারছি নে, কালুদা। প্রাণ হাঁপিয়ে ওঠে, মনে হয় মরণ ছাড়া

২৯৪