পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

আলাদা রাখতে পারি? আজ ওর বাপ নেই, বিপদের সময়ে আমি ওকে দেব না তাে কে দেবে?”

 এর উপর কুমু আর কথা কইতে পারলে না, নীরবে তার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। বিপ্রদাস তাকিয়ায় আবার ঠেস দিয়ে চোখ বুজে রইল।

 অনেকক্ষণ দাদার পায়ে হাত বুলিয়ে অবশেষে কুমু বললে, “দাদা, মায়ের ধন তাে এখন মায়েরই আছে, তাঁর সেই গয়না থাকতে তুমি কেন—”

 বিপ্রদাস আবার চমকে উঠে বসে বললে, “কুমু, এটা তুই কিছুতে বুঝলি নে, তাের গয়না নিয়ে সুবােধ আজ যদি বিলেতে থিয়েটার-কনসার্ট দেখে বেড়াতে পারে তাহলে আমি কি তাকে কোনােদিন ক্ষমা করতে পারব,—না, সে কোনােদিন মুখ তুলে দাঁড়াতে পারবে? তাকে এত শাস্তি কেন দিবি?”

 কুমু চুপ করে রইল, কোনাে উপায় সে খুঁজে পেল না। তখন, অনেকবার যেমন ভেবেছে তেমনি করেই ভাবতে লাগল,—অসম্ভব কিছু ঘটে না কি? আকাশের কোনাে গ্রহ, কোনাে নক্ষত্র এক মুহূর্তে সমস্ত বাধা সরিয়ে দিতে পারে না? কিন্তু শুভলক্ষণ দেখা দিয়েছে যে, কিছুদিন থেকে বার বার তার বাঁ চোখ নাচছে। এর পূর্বে জীবনে আরও অনেকবার বাঁ চোখ নেচেছে, তা নিয়ে কিছু ভাববার দরকার হয় নি। এবারে লক্ষণটাকে মনে-মনে ধরে পড়ল। যেন তার প্রতিশ্রুতি তাকে রাখতেই হবে—শুভলক্ষণের সত্যভঙ্গ যেন না হয়।


১০

 বাদলা করেছে। বিপ্রদাসের শরীরটা ভালাে নেই। বালাপােশ মুড়ি দিয়ে আধশােওয়া অবস্থায় খবরের কাগজ পড়ছে। কুমুর আদরের

৩৩