পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

রয়ে গেছে। তিনি স্বামীর অপরাধে কিছুকালের জন্যেও ধৈর্য হারিয়েছিলেন। কুমু কখনো সে-ভুল করবে না।

 বিপ্রদাসের পায়ের শব্দ শুনে কুমু চমকে উঠল। দাদাকে দেখে বললে, “আলো জ্বেলে দেব কি?”

 “না কুমু দরকার নেই” বলে বিপ্রদাস সিন্দুকে তার পাশে এসে বসল। কুমু তাড়াতাড়ি মেজের উপর নেমে বসে আস্তে আস্তে তার পায়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

 বিপ্রদাস স্নিগ্ধস্বরে বললে, “বৈঠকখানায় লোক এসেছিল তাই তোক ডেকে পাঠাই নি। এতক্ষণ একলা বসে ছিলি?”

 কুমু লজ্জিত হয়ে বললে, “না, ক্ষেমা পিসি অনেকক্ষণ ছিলেন।” কথাটা ফিরিয়ে দেবার জন্যে বললে, “বৈঠকখানায় কে এসেছিল, দাদা?”

 “সেই কথাই তোকে বলতে এসেছি। এ-বছর জষ্টি মাসে তুই আঠারো পেরিয়ে উনিশে পড়লি, তাই না?”

 “হাঁ দাদা, তাতে দোষ হয়েছে কী?”

 “দোষের কথা না। আজ নীলমণি ঘটক এসেছিল। লক্ষ্মী বোন, লজ্জা করিস নে। বাবা যখন ছিলেন, তোর বয়স দশ—বিয়ে প্রায় ঠিক হয়েছিল। হয়ে গেলে তোর মতের অপেক্ষা কেউ করত না। আজ তো আমি তা পারি নে। রাজা মধুসূদন ঘোষালের নাম নিশ্চয়ই শুনেছিস। বংশমর্যাদায় ওঁরা খাটো নন। কিন্তু বয়সে তোর সঙ্গে অনেক তফাত। আমি রাজি হতে পারি নি। এখন, তোর মুখের একটা কথা শুনলেই চুকিয়ে দিতে পারি। লজ্জা করিস নে কুমু।”

 “না লজ্জা করব না।” বলে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। “যার কথা বলছ নিশ্চয়ই তাঁর সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ঠিক হয়েই গেছে।” এটা সেই ঘটকের কথার প্রতিধ্বনি—কখন কথাটা এর মনের গভীরতায় আটকা পড়ে গেছে।

৩৮