পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 বিপ্রদাস আশ্চর্য হয়ে বললে, “কেমন করে ঠিক হল?”

 কুমু চুপ করে রইল।

 বিপ্রদাস তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললে, “ছেলেমানুষি করিস নে, কুমু।”

 কুমুদিনী বললে, “তুমি বুঝবে না দাদা, একটুও ছেলেমানুষি করছি নে।”

 দাদার উপর তার অসীম ভক্তি। কিন্তু দাদা তাে দৈববাণী মানে না, কুমুদিনী জানে এইখানেই দাদার দৃষ্টির ক্ষীণতা।

 বিপ্রদাস বললে, “তুই তাে তাঁকে দেখিস নি।”

 “তা হােক আমি যে ঠিক জেনেছি।”

 বিপ্রদাস ভালাে করেই জানে এই জায়গাতেই ভাইবােনের মধ্যে অসীম প্রভেদ।

 কুমুর চিত্তের এই অন্ধকার মহলে ওর উপর দাদার একটুও দখল নেই। তবে বিপ্রদাস আর একবার বললে, “দেখ কুমু, চির জীবনের কথা, ফস করে একটা খেয়ালের মাথায় পণ করে বসিস নে।”

 কুমু ব্যাকুল হয়ে বললে, “খেয়াল নয় দাদা, খেয়াল নয়। আমি তােমার এই পা ছুঁয়ে বলছি আর কাউকে বিয়ে করতে পারব না।”

 বিপ্রদাস চমকে উঠল। যেখানে কার্যকারণের যােগাযােগ নেই সেখানে তর্ক করবে কী নিয়ে? অমাবস্যার সঙ্গে কুস্তি করা চলে না। বিপ্রদাস বুঝেছে কী একটা দৈব-সংকেত কুমু মনের মধ্যে বানিয়ে বসেছে। কথাটা সত্য। আজই সকালে ঠাকুরকে উদ্দেশ করে মনে মনে বলেছিল, এই বেজোড় সংখ্যার ফুলে জোড় মিলিয়ে সবশেষে যেটি বাকি থাকে তার রঙ যদি ঠাকুরের মতাে নীল হয় তবে বুঝব তাঁর ইচ্ছা। সব-শেষের ফুলটি হল নীল অপরাজিতা।

৩৯