পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আজ ৭ই আষাঢ়। অবিনাশ ঘােষালের জন্মদিন। বয়স তার হল বত্রিশ। ভাের থেকে আসছে অভিনন্দনের টেলিগ্রাম, আর ফুলের তোড়া।

 গল্পটার এইখানে আরম্ভ। কিন্তু আরম্ভের পূর্বেও আরম্ভ আছে। সন্ধ্যাবেলায় দীপ জ্বালার আগে সকালবেলায় সলতে পাকানাে।

 এই কাহিনীর পৌরাণিক যুগ সন্ধান করলে দেখা যায় ঘােষালরা এক সময়ে ছিল সুন্দরবনের দিকে, তার পরে হুগলি জেলায় নুরনগরে। সেটা শহির থেকে পর্টুগীজদের তাড়ায়, না ভিতর থেকে সমাজের ঠেলায় ঠিক জানা নেই। মরিয়া হয়ে যারা পুরানাে ঘর ছাড়তে পারে, তেজের সঙ্গে নূতন ঘর বাঁধবার শক্তিও তাদের। তাই ঘােষালদের ঐতিহাসিক যুগের শুরুতেই দেখি, প্রচুর ওদের জমিজমা, গােরু-বাছুর, জনমজুর, পালপার্বণ, আদায়বিদায়। আজও তাদের সাবেক গ্রাম শেয়াকুলিতে অন্তত বিঘে _শেক আয়তনের ঘােষাল-দিঘি পানা-অবগুণ্ঠনের ভিতর থেকে পঙ্করুদ্ধ কণ্ঠে অতীত গৌরবের সাক্ষ্য দিচ্ছে। আজ সে-দিঘিতে শুধু নামটাই ওদের, জলটা চাটুজ্যে জমিদারের। কী করে একদিন ওদের পৈতৃক মহিমা জলাঞ্জলি দিতে হয়েছিল সেটা জানা দরকার।

 এদের ইতিহাসের মধ্যম পরিচ্ছেদে দেখা যায়, খিটিমিটি বেধেছে চাটুজ্যে জমিদারের সঙ্গে। এবার বিষয় নিয়ে নয়, দেবতার পূজো নিয়ে। ঘােষালরা স্পর্ধা করে চাটুজ্যেদের চেয়ে দু-হাত উঁচু প্রতিমা গড়িয়েছিল। চাটুজ্যেরা তার জবাব দিলে। রাতারাতি বিসর্জনের রাস্তার মাঝে মাঝে এমন মাপে তােরণ বসালে যাতে করে ঘােষালদের প্রতিমার মাথা যায় ঠেকে। উঁচু-প্রতিমার দল তােরণ ভাঙতে বেরোয়, নিচু-প্রতিমার দল তাদের মাথা ভাঙতে ছােটে। ফলে, দেবী সে-বার বাঁধা বরাদ্দর চেয়ে