পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

কাদাখোঁচা পাখি মেরে নিয়ে উপস্থিত। আজ চলেছে চন্দনদহের বিলে। এই শীতের সময় সেখানে হাঁসের মরসুম—রাক্ষুসে ওজনের জীবহত্যা হবে,অহিরাবণ মহীরাবণ হিড়িম্ব ঘটোৎকচ ইস্তিক কুম্ভকর্ণের পর্যন্ত পিণ্ডি দেবার উপযুক্ত,—প্রেতলােকে দশমুণ্ড রাবণের চোয়াল ধরে যাবার মতাে।”

 বিপ্রদাস স্তম্ভিত হয়ে রইল, কিছু বললে না।

 নবগােপাল বললে, “তােমারই হুকুম ওই বিলে কেউ শিকার করতে পাবে না। সেবার জেলার ম্যাজিস্ট্রেটকে পর্যন্ত ঠেকিয়েছিলে— আমরা তো ভয় করেছিলুম তােমাকেও পাছে সে রাজহাঁস ভুল করে গুলি করে বসে। লােকটা ছিল ভদ্র, চলে গেল। কিন্তু এরা গাে-মৃগ-দ্বিজ কাউকে মানবার মতো মানুষ নয়। তবু যদি বল তো একবার না হয়—”

 বিপ্রদাস ব্যস্ত হয়ে বললে, “না না, কিছু বােলাে না।”

 বিপ্রদাস বাঘ শিকারে জেলার মধ্যে সব-সেরা। কোনাে একবার পাখি মেরে তার এমন ধিক্‌কার হয়েছিল যে, সেই অবধি নিজের এলেকায় পাখি মারা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে।

 শিয়রের কাছে কুমু বসে বিপ্রদাসের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। নবগােপাল চলে গেলে সে মুখ শক্ত করে বললে, “দাদা, বাবণ করে পাঠাও।”

 “কী বারণ করব?”

 “পাখি মারতে।”

 “ওরা ভুল বুঝবে কুমু, সইবে না।”

 “তা বুঝুক ভুল। মান-অপমান শুধু ওদের একার নয়।”

 বিপ্রদাস কুমুর মুখের দিকে চেয়ে মনে-মনে হাসলে। সে জানে

৫১