পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

কঠিন নিষ্ঠার সঙ্গে কুমু মনে-মনে সতীধর্ম অনুশীলন করছে। ছায়েবানুগতাস্বচ্ছা। সামান্য পাখির প্রাণ নিয়ে কায়ার সঙ্গে ছায়ার পথভেদ ঘটবে না কি?

 বিপ্রদাস স্নেহের স্বরে বললে, “রাগ করিস নে কুমু, আমিও একদিন পাখি মেরেছি। তখন অন্যায় বলে বুঝতেই পারি নি। এদেরও সেই দশা।”

 অক্লান্ত উৎসাহের সঙ্গে চলল শিকার, পিকনিক, এবং সন্ধ্যেবেলার ব্যাণ্ডের সংগীতসহযােগে ইংরেজ অভ্যাগতদের নাচ। বিকালে টেনিস; তা ছাড়া দিঘির নৌকোর ’পরে তিন-চার পর্দা তুলে দিয়ে বাজি রেখে পালের খেলা;—তাই দেখতে গ্রামের লােকেরা দিঘির পাড়ে দাঁড়িয়ে যায়। রাত্রে ডিনারের পরে চীৎকার চলে, “ফর হী ইজ এ জলি গুড ফেলো।” এই সব বিলাসের প্রধান নায়কনায়িকা সাহেব-মেম, তাতেই গাঁয়ের লােকের চমক লাগে। এরা যে সােলার টুপি মাথায় ছিপ ফেলে মাছ ধরে, সেও বড়ো অপরূপ দৃশ্য। অন্য পক্ষে লাঠিখেলা কুস্তি নৌকোবাচ যাত্রা শখের থিয়েটার এবং চারটে হাতির সমাবেশ এর কাছে লাগে কোথায়?

 বিবাহের দুদিন আগে গায়ে-হলুদ। দামি গহনা থেকে আরম্ভ করে খেলার পুতুল পর্যন্ত সওগাত যা বরের বাসা থেকে এল তার ঘটা দেখে সকলে অবাক। তার বাহনই বা কত! চাটুজ্যেরা খুব দরাজ হাতেই তাদের বিদেয় করলে।

 অবশেষে জনসাধারণকে খাওয়ানাে নিয়ে বৈবাহিক কুরুক্ষেত্রের দ্রোণপর্ব শুরু হল।

 সেদিন ঢােল পিটিয়ে সর্বসাধারণের নিমন্ত্রণ মধুসাগরের তীরে মধুপুরীতে। রবাহূত অনাহূত কারও বাদ নেই। নবগােপাল রেগে

৫২