পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

এমন সময় কুমুর কানে গেল সেলুন-গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে একজন ভদ্রলােক বলছে, “দেখুন এই চাষির মেয়েকে আড়কাটি আসাম চা-বাগানে ভুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, পালিয়ে এসেছে; গােয়ালন্দ পর্যন্ত টিকিটের টাকা আছে, ওর বাড়ি দুমরাঁও, যদি সাহায্য করেন তাে এই মেয়েটি বেঁচে যায়। সেলুন-গাড়ি থেকে একটা মস্ত তাড়ার আওয়াজ কুমু শুনতে পেলে। সে আর থাকতে পারলে না, তখনই ডানদিকের জানলা খুলে তার পুঁতিগাঁথা থলে উজাড় করে দশ টাকা মেয়েটির হাতে দিয়েই জানালা বন্ধ করে দিলে। দেখে এক জন মেয়ে বলে উঠল, “আমাদের বউয়ের দরাজ হাত দেখি।” আর-একজন বললে, “দরাজ নয় তাে দরজা, লক্ষ্মীকে বিদায় করবার।” আর-এক জন বললে, “টাকা ওড়াতে শিখেছে, রাখতে শিখলে কাজে লাগত।” এটাকে ওরা দেমাক বলে ঠিক করলে, বাবুরা যাকে এক পয়সা দিলে না, ইনি তাকে অমনি ঝনাত করে টাকা ফেলে দেন, এত কিসের গুমাের! ওদের মনে হল এও বুঝি সেই চাটুজ্যে-ঘােষালদের চিরকেলে রেষারেষির অঙ্গ।

 এমন সময়ে ওদের মধ্যে একটি মােটাসােটা কালােকোলাে মেয়ে, মস্ত ডাগর চোখ, স্নেহরসে ভরা মুখের ভাব, কুমুর সমবয়সী হবে, ওর কাছে এসে বসল। চুপি চুপি বললে, “মন কেমন করছে ভাই? এদের কথায় কান দিয়াে না, দু-দিন এই রকম টেপাটেপি বলাবলি করবে, তার পরে কণ্ঠ থেকে বিষ নেমে গেলেই থেমে যাবে।” এই মেয়েটি কুমুর মেজো জা, নবীনের স্ত্রী। ওর নাম নিস্তারিণী, ওকে সবাই মােতির মা বলে ডাকে।

 মােতির মা কথা তুললে, “যেদিন নুরনগরে এলুম, ইস্টিশনে তােমার দাদাকে দেখলুম যে।”

 কুমু চমকে উঠল। ওর দাদা যে স্টেশনে অভ্যর্থনা করতে গিয়েছিল সে-খবর এই প্রথম শুনলে।

৬৭