পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

ওই পাশের ঘরে,— তুমি একটু কেঁদে নাও ভাই, চোখের জল যে বুক ভরে জমে উঠেছে।” বলে সে চলে গেল।

 কুমু চৌকির উপর বসে পড়ল। কান্না পরে হবে, এখন ওর বড়াে দরকার হয়েছে নিজেকে ঠিক করা। ভিতরে ভিতরে সকলের চেয়ে যে-ব্যথাটা ওকে বাজছিল সে হচ্ছে নিজের কাছে নিজের অপমান। এতকাল ও যা-কিছু সংকল্প করে এসেছে ওর বিদ্রোহী মন সম্পূর্ণ তার উলটো দিকে চলে গেছে। সেই মনটাকে শাসন করবার একটুও সময় পাচ্ছিল না। ঠাকুর, বল দাও, বল দাও, আমার জীবন কালি করে দিয়াে না। আমি তােমার দাসী, আমাকে জয়ী করো, সে জয় তােমারই।

 পরিণতবয়সী আঁটসাঁট গড়নের শ্যামবর্ণ একটি সুন্দরী বিধবা ঘরে ঢুকেই বললে “মােতির মা তােমাকে একটু ছুটি দিয়েছে সেই ফাঁকে এসেছি; কাউকে তাে কাছে ঘেঁষতে দেবে না, বেড়ে রাখবে তােমাকে— যেন সিঁধকাটি নিয়ে বেড়াচ্ছি, ওর বেড়া কেটে তােমাকে চুরি করে নিয়ে যাব। আমি তােমার জা, শ্যামাসুন্দরী; তােমার স্বামী আমার দেওর। আমরা তাে ভেবেছিলেম শেষ পর্যন্ত জমাখরচের খাতাই হবে ওর বউ। তা ওই খাতার মধ্যে জাদু আছে ভাই, এত বয়সে এমন সুন্দরী ওই খাতার জোরেই জুটল। এখন হজম করতে পারলে হয়। ওইখানে খাতার মন্তর খাটে না। সত্যি করে বলো ভাই, আমাদের বুড়াে দেওরটিকে পছন্দ হয়েছে তাে?”

 কুমু অবাক হয়ে রইল, কী জবাব দেবে ভেবেই পেলে না। শ্যামা বলে উঠল, “বুঝেছি, তা পছন্দ না হলেই বা কি, সাত পাক যখন ঘুরেছ তখন একুশ পাক উলটো ঘুরলেও ফাঁস খুলবে না।”

 কুমু বললে, “এ কী কথা বলছ দিদি!”

 শ্যামা জবাব দিলে, “খােলসা করে কথা বললেই কি দোষ হয় বােন?

৭৯