পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “মেরে গিরিধর গােপাল, ঔর নাহি কোহি”— দাদার কাছে শেখা মীরাবাই-এর এই গানটা বারবার মনে-মনে আওড়াতে লাগল।

 মধুসূদনের অত্যন্ত রূঢ় যে-পরিচয় সে পেয়েছে তাকে কিছুই নয় বলে, জলের উপরকার বুদ্‌বুদ বলে উড়িয়ে দিতে চায়— চিরকালের যিনি সত্য, সমস্ত আবৃত করে তিনিই আছেন, “ঔর নাহি কোহি, ঔর নাহি কোহি।” এ ছাড়া আর-একটা পীড়ন আছে তাকেও মায়া বলতে চায়— সে হচ্ছে জীবনের শূন্যতা। আজ পর্যন্ত যাদের নিয়ে ওর সমস্ত কিছু গড়ে উঠেছে, যাদের বাদ দিতে গেলে জীবনের অর্থ থাকে না, তাদের সঙ্গে বিচ্ছেদ,— সে নিজেকে বলছে এই শূন্য ও পূর্ণ—

বাপে ছাড়ে, মায়ে ছাড়ে, ছাড়ে সগা সহী,
মীরা প্রভু লগন লগী যো ন হোয়ে হােয়ী।

ছেড়েছেন তাে বাপ, ছেড়েছেন তাে মা; কিন্তু তাঁদের ভিতরেই যিনি চিরকালকার তিনি তাে ছাড়েন নি। ঠাকুর আরও যা-কিছু ছাড়ান না কেন, শূন্য ভরাবেন বলেই ছাড়িয়েছেন। আমি লেগে রইলুম, যা হয় তা হােক। মনের গান কখন তার গলায় ফুটে উঠল তা টেরই পেলে না দুই চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল।

 মােতির মা কথাটি বললে না, চুপ করে দেখলে, আর শুনলে। তার পরে কুমু যখন অনেকক্ষণ ধরে প্রণাম করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে শুয়ে পড়ল তখন মােতির মার মনে একটা চিন্তা দেখা দিল যা পূর্বে আর কখনাে ভাবে নি।

 ও ভাবতে লাগল, আমাদের যখন বিয়ে হয়েছিল তখন আমরা তাে কচি খুকী ছিলুম, মন বলে একটা বালাই ছিল না। ছােটোছেলে কাঁচা ফলটাকে যেমন টপ করে বিনা আয়ােজনে মুখে পুরে দেয়, স্বামীর সংসার

৮৩