পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

বউ গায়ের জামা গয়নাগুলাে খুলবে না?” মােতির মা যতক্ষণ পারে ওকে সময় দিতে চায়। অবশেষে যখন বুঝলে আর চলবে না তখন দরজা খুলে দেখে, বউ মূর্ছিত হয়ে মেজের উপর পড়ে আছে।

 গােলমাল পড়ে গেল। ধরাধরি করে বিছানার উপর তুলে দিয়ে কেউ জলের ছিটে দেয়, কেউ বাতাস করে। কিছুক্ষণ পরে যখন চেতনা হল, কুমু বুঝতে পারলে না কোথায় সে আছে— ডেকে উঠল, “দাদা”। মােতির মা তাড়াতাড়ি তার মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে বললে, “ভয় নেই দিদি, এই যে আমি আছি।” বলে ওর মুখটা বুকের উপর তুলে নিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরল। সবাইকে বললে, “তােমরা ভিড় ক’রাে না আমি এখনই ওঁকে নিয়ে যাচ্ছি।” কানে-কানে বলতে লাগল, “ভয় করিস নে ভাই, ভয় করিস নে।” কুমু ধীরে ধীরে উঠল। মনে-মনে ঠাকুরের নাম করে প্রণাম করলে। ঘরের অন্য পাশে একটা তক্তাপােশের উপর হাবলু গভীর ঘুমে মগ্ন— তার পাশে গিয়ে তার কপালে চুমাে খেলে। মােতির মা তাকে শোবার ঘর পর্যন্ত পৌছিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, “এখনও ভয় করছে দিদি?”

 কুমু হাতের মুঠো শক্ত করে একটু হেসে বললে, “না, আমার কিচ্ছু ভয় করছে না।” মনে-মনে বলছে, “এই আমার অভিসার, বাইরে অন্ধকার ভিতরে আলাে।”

মেরে গিরিধর গােপাল ঔর নাহি কোহি।


২৫

 ইতিমধ্যে শ্যামাসুন্দরী হাঁপাতে হাঁপাতে মধুকে এসে জানালে, “বউ মুর্ছো গেছে।” মধুসূদনের মনটা দপ করে জ্বলে উঠল; বললে, “কেন, তাঁর হয়েছে কী?”

৮৭