পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 শ্যামা বলে উঠল, “ওই আসছে বউ, আমি যাই ভাই। কিন্তু দেখো ওর সঙ্গে রাগারাগি ক’রো না, আহা, ও ছেলেমানুষ!”

 কুমু ঘরে ঢুকতেই মধুসূদন আর থাকতে পারলে না, বলে উঠল, “বাপের বাড়ি থেকে মুর্ছো অভ্যেস করে এসেছ বুঝি? কিন্তু আমাদের এখানে ওটা চলতি নেই। তোমাদের ওই নুরনগরি চাল ছাড়তে হবে।”

 কুমু নির্নিমেষ চোখ মেলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল, একটি কথাও বললে না।

 মধুসূদন ওর মৌন দেখে আরও রেগে গেল। মনের গভীর তলায় এই মেয়েটির মন পাবার জন্যে একটা আকাঙ্ক্ষা জেগেছে বলেই ওর এই তীব্র নিষ্ফল রাগ। বলে উঠল, “আমি কাজের লোেক, সময় কম, হিসটিরিয়াওআলী মেয়ের খেদমদগারি করবার ফুরসত আমার নেই, এই স্পষ্ট বলে দিচ্ছি।”

 কুমু ধীরে ধীরে বললে, “তুমি আমাকে অপমান করতে চাও? হার মানতে হবে। তোমার অপমান মনের মধ্যে নেব না।”

 কুমু কাকে এ-সব কথা বলছে? ওর বিস্ফারিত চোখের সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে? মধুসূদন অবাক হয়ে গেল, ভাবলে এ-মেয়ে ঝগড়া করে না কেন? এর ভাবখানা কী?

 মধুসূদন বক্রোক্তি করে বললে, “তুমি তোমার দাদার চেলা, কিন্তু জেনে রেখো, আমি তোমার সেই দাদার মহাজন, তাকে এক হাটে কিনে আর-এক হাটে বেচতে পারি।”

 ও যে কুমুর দাদার চেয়ে শ্রেষ্ঠ এ-কথা কুমুর মনে দেগে দেবার জন্যে মূঢ় আর কোনো কথা খুঁজে পেলে না।

 কুমু বললে, “দেখো, নিষ্ঠুর হও তো হ’য়ো, কিন্তু ছোটো হ’য়ো না।” বলে সোফার উপর বসে পড়ল।

৮৯